দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। দেশের কৃষকদের স্বার্থ বিবেচনায় আপাতত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর থেকেই বাজারে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। দেখা দিয়েছে সরবরাহ সংকট। স্বাভাবিক সময়ে খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন ৪০টির বেশি পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক ঢুকলেও এখন আসছে মাত্র ১০ থেকে ১২টি। এ হিসাবে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ আসছে চাহিদার মাত্র ২৫ শতাংশ। ফলে এক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম আরও বেড়েছে পাঁচ টাকা। এ নিয়ে তিন দিনে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। আর এক সপ্তাহে দাম হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। হুহু করে এভাবে দাম বাড়ায় পেঁয়াজের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে- এই প্রশ্ন এখন সবার। শিগগির সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দাম আরও বাড়ার কথা বলছেন সংশ্নিষ্টরা।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'গত ৫ মের পর থেকে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। অনুমতি মিললে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, না হয় সংকট আরও ঘনীভূত হবে।'

খাতুনগঞ্জের এক আমদানিকারক বলেন, 'সার্বিক বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই না করেই হঠাৎ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্তে বাজারে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের বাজার অনেকটা ভারতনির্ভর হওয়ায় সেখান থেকে কয়েক দিন ধরে পেঁয়াজ না আসায় এরই মধ্যে দাম অনেক বেড়েছে।'

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'কয়েক মাস ধরেই পেঁয়াজের বাজার ছিল অনেকটা স্থিতিশীল। ঈদের আগেও মানুষ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে পেরেছেন। সরবরাহ বাড়াতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।' খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, 'বিভিন্ন স্থলবন্দরে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক ভিড় করে আছে। সরকার আমদানি অনুমতি (আইপি) না দেওয়ায় সেসব পেঁয়াজ বাজারে আসতে পারছে না।'

পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক ঢুকছে মাত্র ১০-১২টি : খাতুনগঞ্জে প্রধানত হিলি স্থলবন্দর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন এই তিন স্থলবন্দর থেকে খাতুনগঞ্জে ৪০টির বেশি পেঁয়াজের ট্রাক ঢোকে। এখন সেটি নেমেছে তলানিতে। ঢুকছে মাত্র ১০ থেকে ১২ ট্রাক। খাতুনগঞ্জের গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, 'খাতুনগঞ্জ বাজার ভারতনির্ভর হওয়ায় চাহিদামতো পেঁয়াজ না এলে সংকট দানা বাঁধে। সরবরাহ ঘাটতির কারণে প্রতিদিনই কেজিতে কয়েক টাকা করে বাড়ছে দাম। এভাবে আর কয়েক দিন চলতে থাকলে দাম আগের মতো আবারও রেকর্ড করবে।'

এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে আরও ৫ টাকা :এক দিনের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম আরও তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। এক দিন আগে এই পেঁয়াজ মানভেদে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার বেচাকেনা হয়েছে ৪০ থেকে ৪৩ টাকায়। পাইকারি মোকামে দাম এত বেশি বেড়ে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এক দিন আগে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। সেসব পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায়।

বাড়তি পেঁয়াজ কেনার হিড়িক :চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের আরএন এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক সুনীল চৌধুরী বলেন, 'দাম আরও বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকে অনেকেই অপ্রয়োজনে বাড়তি পেঁয়াজ কিনে মজুত করছেন। যে ক্রেতা আগে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনতেন; তিনি এখন কিনছেন প্রয়োজনের দ্বিগুণ। অনেক খুচরা বিক্রেতাও বাড়তি পেঁয়াজ মজুত করে রাখছেন।'

নগরের কাজির দেউড়ি বাজারে আসা চাকরিজীবী কানিজ ফাতেমা বলেন, 'তিন দিন আগেও একসঙ্গে তিন কেজি পেঁয়াজ কিনেছি ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। এখন এক কেজি পেঁয়াজের দাম চাচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন দাম নাকি আরও বাড়বে। তাই একসঙ্গে ১০ কেজি পেঁয়াজ কিনেছি।'

নীরব প্রশাসন :পেঁয়াজের দাম বাড়লেও তা তদারকিতে অনেকটাই নীরব প্রশাসন। জেলা প্রশাসন এসব বিষয় তদারকির দায়িত্বে থাকলেও এখনও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ বলেন, 'তেলের পাশাপাশি পেঁয়াজের বাজার অস্থির হওয়ার বেশকিছু তথ্য পেয়েছি আমরা। শিগগির পেঁয়াজের বাজারে অভিযান চালানো হবে।'