ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর হুমকির পর থানায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন এসিল্যান্ড এবং সময় টিভির এক সাংবাদিক। জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আনার কলির বিরুদ্ধে দু'জনের জিডির ঘটনাটি এখন টক অব দ্য আশুগঞ্জে পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, রেলওয়ের জায়গা ইজারা নিয়ে অবৈধভাবে জলাশয় ভরাট করে সেখানে মার্কেট নির্মাণ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আনার কলি। গত বুধবার দুপুরে জলাশয় ভরাটের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে রোষানলে পড়েন সময় টিভির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যুরো প্রধান উজ্জ্বল চক্রবর্তী ও তাঁর ক্যামেরাপারসন মো. জুয়েল রহমান। আনার কলি সাংবাদিক উজ্জ্বল চক্রবর্তীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনায় ওই সাংবাদিক আশুগঞ্জ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে জিডি করেন। এর আগে জলাশয় ভরাট করে মার্কেট নির্মাণকাজে বাধা দিতে গিয়ে ওই নেত্রীর তোপের মুখে পড়েন আশুগঞ্জের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল হক। তিনিও আনার কলির বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সোনারামপুর (ফকিরবাড়ি) গ্রামের প্রয়াত আতিকুল ইসলামের স্ত্রী আনার কলি স্থানীয় রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রেলওয়ের জায়গা মৎস্য, কৃষি ও নার্সারি করার শর্তে ইজারা নেন। তবে তিনি শর্ত ভঙ্গ করে সেখানে মার্কেট করার জন্য জলাশয় ভরাট করতে থাকেন। খবর পেয়ে ৩০ এপ্রিল আশুগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধ মাটি ভরাটে বাধা দেন। এ সময় সেখানে থাকা আনার কলি ও তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজন সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ সরকারি কাজে বাধা দেন। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শত বছরের পুরোনো এ জলাশয়টির অবৈধ ভরাট বন্ধসহ খাস খতিয়ান ও এলজিইডির রাস্তার জায়গা উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন আশুগঞ্জ বাজারের বাসিন্দা মো. হারুনুর রশীদ।

আনার কলির বলেন, রেলওয়ের কাছ থেকে জায়গাটি আমি বাণিজ্যিকভাবে লিজ এনেছি। জলাশয় ভরাট করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জলাশয়ের পাড় ভরাট করে সেখানে কয়েকটি দোকান নির্মাণ করেছি। সাংবাদিকের সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আর এসিল্যান্ড জায়গাটি দেখতে এসে আশুগঞ্জ থানার ওসির সামনে আমার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন।

আশুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরবিন্দু বিশ্বাস জানান, লিজের শর্ত ভঙ্গ করে আনার কলি অবৈধভাবে জলাশয় ভরাট করছে খবর পেয়ে এসিল্যান্ড বাধা প্রদান করলে তাঁর সঙ্গে অশোভন আচরণ করা হয়। এ ঘটনায় এসিল্যান্ডের পক্ষে নাজির মনিরুজ্জামান খন্দকার জিডি করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আমরা রেলের সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাব।

রেলওয়ের ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, লিজের শর্ত ভঙ্গ করলে এবং অবৈধভাবে জলাশয় ভরাট করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।