দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু সংগঠন থেকে আজীবন বহিষ্কার এবং জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা মহানগর শাখার সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে কুসিক নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা ও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ না নিতে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর দল থেকে পদত্যাগ করেন মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার। সাক্কু ২০১২ ও ২০১৭ সালের কুসিক নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে বিএনপির সমর্থনে টানা দু'বার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার ছিল কুসিক নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন। এতে ৬ মেয়র প্রার্থী সবারই মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে বাতিল করা হয় ১০ কাউন্সিলরের মনোনয়ন।

বৈধ মেয়র প্রার্থীরা হলেন-আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল।

বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাক্কুকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপির অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কার করা হয় নিজাম উদ্দিন কায়সারকে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলামের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। দলটির কুমিল্লা মহানগর শাখার সিনিয়র সহসভাপতি মনির হোসেন পারভেজকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে সাক্কুর ব্যক্তিগত সহকারী কবির হোসেন মজুমদার গণমাধ্যমে খুদে বার্তা পাঠিয়ে জানান, মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক থেকে পদত্যাগ করেছেন। তাঁর পদত্যাগপত্রের অনুলিপি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় মহাসচিব এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতির কাছে পৌঁছানো হয়েছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর ধর্মসাগর পাড়ের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, 'কোনো হুমকি ও ষড়যন্ত্র আমাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে পারবে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিজয়ী হবো বলে আশা করছি।'

বাতিল ১০ কাউন্সিলরের মনোনয়ন: যাচাই-বাছাইয়ে ঋণখেলাপি, হলফনামায় সই না দেওয়া ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সমস্যার কারণে সাধারণ ওয়ার্ডে ৯ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একজনসহ ১০ কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই শুরু হয়।

গত ১৭ মে মেয়র পদে ৬ জন, নারী কাউন্সিলর পদে ৩৮ ও সাধারণ ওয়ার্ডে ১২০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।

যাঁদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে তাঁরা হলেন- ফারজানা আক্তার, একরামুল হক বাবু, আবুল কালাম আজাদ, বিল্লাল হোসেন, সৈয়দ রোমন আহমেদ, মো. মিন্টু, জামাল হোসেন কাজল, আবুল কালাম আজাদ, কবির আহমেদ ও জুয়েল।

রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ৬ মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নই বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ১০ কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়ন। মনোনয়ন বৈধতার জন্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ২০-২২ মে পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন।

কুসিক নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ মে। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৭ মে। ১০৫ কেন্দ্রের সব কটিতেই ইভিএমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ জুন।