- সারাদেশ
- টাঙ্গাইলে ১ মণ ধান বিক্রি করেও মিলছে না শ্রমিক
টাঙ্গাইলে ১ মণ ধান বিক্রি করেও মিলছে না শ্রমিক

টাঙ্গাইলে কৃষকের স্বপ্নের সোনালি ফসল বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টিতে জেলার ১২ উপজেলায় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। আবার কয়েকটি উপজেলায় পাকা বোরো ধান পানিতে ডুবে পচেও গেছে। হাজার টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এদিকে বাজারে এক মণ ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা। ফলে এক মণ ধান বিক্রি করে একজন শ্রমিকের মজুরি দিতে না পারায় মহাবিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শ্রমিকসংকট হলেও উত্তরবঙ্গের ধান কাটা শ্রমিকরা দিনমজুর হিসেবে ধান কাটতে ভিড় করছেন জেলার বাসাইল, সখীপুর, মির্জাপুর, কালিহাতী, দেলদুয়ার, নাগরপুর ও সদর উপজেলার করটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকায় দলবদ্ধ হয়ে শ্রমিকরা ধানচাষিদের বাড়িতে চুক্তিতে ধান কাটতে যাচ্ছেন।
সোমবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে শ্রমিকরা তাদের দাম হাঁকাচ্ছেন ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। দর দাম করে তিন বেলা খাওয়ার চুক্তিতে তারা কাজে যাচ্ছেন। এছাড়াও চার থেকে ১০ জন করে গ্রুপ হয়ে ধান কাটার চুক্তি করছেন তারা।
কুড়িগ্রাম থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিক সলিম মিয়া, আযম আলী ও রফিক খানসহ অনেকেই বলেন, কয়েকদিন আগে নিজের এলাকায় ধান কাটা শেষ হয়েছে। বাড়িতে বসে থেকে কী করব। জানতে পারলাম টাঙ্গাইলে ধানকাটা শ্রমিকের প্রতিদিন মজুরি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। তাই এলাকার চারজনের একটি গ্রুপ এলেঙ্গায় শ্রমিক হাটে আসছি।
রংপুর থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিক কাশেম মিয়া, শাকিল খান, আলতাব মিয়াসহ আরও অনেকেই বলেন, সোমবার সকালে করটিয়া আইছি। স্থানীয় অনেক গেরোস্থরা দাম-দর করছেন। তারমধ্যে কেউ কেউ ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা দিন মজুরি হিসেবে বলছেন। পরে ১১৫০ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করতে যাচ্ছি।
ধান কাটা শ্রমিক নিতে আসা ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইলের নুরুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে পানি এলাকায় আসতে শুরু করেছে। যেকোনো সময় পানি এসে তলিয়ে যেতে পারে আমার সাড়ে চার বিঘা জমি। এলাকায় ধান কাটা শ্রমিকসংকট। এলেঙ্গা ধান কাটা শ্রমিক কেনা-বেচা হয় শুনে এখানে আসছি। ১১৫০ টাকা করে পাঁচজন শ্রমিক নিয়েছি। আবার তিন বেলা খাবার দিতে হবে। শ্রমিক প্রতি ১৩০০ টাকা খরচ পড়বে। ধানের যে দাম বর্তমানে তা আমাদের লোকসানে পড়তে হচ্ছে।
এলেঙ্গা থেকে শ্রমিক নিতে আসা সরাতৈল গ্রামের মোহাম্মদ আলী বলেন, ইতোমধ্যে বৃষ্টির পানিতে পাকা ধান শুয়ে পড়েছে। ধানের গোড়া পচন শুরু হয়েছে। লোক পাওয়া যায় না। এলাকাতে যারা ধান কাটার কাজ করেন তারাও নিজেদের ধান কাটতে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ পানির কথা শুনে কাজ করতেও চান না। এ জন্য এলেঙ্গায় এসেছি উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিক নিতে।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসানুল বাশার বলেন, জেলায় ৭৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। হঠাৎ করে পানি আসায় বাকি ২৫ ভাগ ধান নিয়ে কৃষকরা সমস্যায় পড়েছেন। কৃষকদের ধান কাটতে উদ্বুদ্ধ করতে বন্যাকবলিত এলাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। লাভ না হলেও ধান রক্ষা করার জন্য বেশি দাম দিয়ে শ্রমিক নিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে।
মন্তব্য করুন