- সারাদেশ
- বন্যায় পর্যটন ব্যবসায় ধস
বন্যায় পর্যটন ব্যবসায় ধস

বন্যার ভাঙনে চলে গেছে ঘর ও ভিটা। তাই নতুন ঘর নির্মাণ করছে বন্যার্ত এক পরিবার। বৃহস্পতিবার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নের বুরদেও গ্রাম থেকে তোলা ছবি - ইউসুফ আলী
ঈদের পর সিলেটের সবক'টি পর্যটন কেন্দ্র ছিল জমজমাট, ছিল পর্যটকে মুখর। করোনার কারণে দুই বছরের ক্ষতির পর মুখে হাসিও ফুটেছিল পর্যটন ব্যবসায়ীদের। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন তাঁরা। তবে ঈদের সপ্তাহখানেক পর টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট অঞ্চলে দেখা দেয় বন্যা। বন্যার কারণে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকা, গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল ও পানতুমাইয়ে পর্যটক সমাগম একেবারেই কমে গেছে। ধস নেমেছে সিলেটের পর্যটন ব্যবসায়। একই অবস্থা সুনামগঞ্জেও। টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী বিলাসবহুল ট্রলারের মালিকরা হয়ে পড়েছেন বেকার।
ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। ঘাটে কয়েকটি নৌকা রয়েছে তাঁর। পাশেই আছে খাবারের হোটেল। সাইফুল বললেন, ১১ মে থেকে তাঁদের এখানে তেমন পর্যটক আসছেন না। করোনার পর বন্যা- এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগবে তাঁদের।
এদিকে কয়েকদিনের বন্যায় গোয়াইনঘাটের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে, তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। বর্তমানে পানি কমতে শুরু করায় ফুটে উঠছে রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে গোয়াইনঘাটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো ভ্রমণে বিমুখ হয়ে পড়েছেন পর্যটকরা। জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পানতুমাইয়ে পর্যটক সমাগম একেবারেই কমে গেছে। এতে স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড, ফটোগ্রাফার, নৌকার মাঝি, ব্যবসায়ীসহ কয়েক হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, জাফলংয়ে সুনসান নীরবতা। স্থানীয় নৌকার মাঝিরা পর্যটকের অপেক্ষায় রয়েছেন। বিভিন্ন হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও কসমেটিকসের দোকানগুলোতেও নেই কর্মব্যস্ততা। একই অবস্থা জলাবন রাতারগুল, পানতুমাই ঝরনা ও জলপাথরের বিছানাখ্যাত বিছনাকান্দিতে।
জাফলং ফটোগ্রাফার সমবায় সমিতির সভাপতি নিলয় পারভেজ সোহেল বলেন, পর্যটক না আসায় আমরা একেবারেই বেকার হয়ে পড়েছি। স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীরা বলেন, বন্যার কারণে পর্যটকরা ভ্রমণে না আসায় তাঁদের বেচাকেনা একেবারে নেই বললেই চলে।
জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মো. রতন শেখ বলেন, পর্যটক না আসায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন।
রাতারগুলের নৌকা ব্যবসায়ী আনোয়ার মিয়া জানান, তাঁদের এখানে পর্যটকের অপেক্ষায় আছেন শতাধিক নৌকার মালিক।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, সিলেটে ব্যবসার অন্যতম খাত পর্যটন। গত কয়েকদিনের বন্যায় পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে, ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা তাঁদের সাধ্যমতো সহযোগিতার চেষ্টা করব।
বিলাসবহুল ট্রলারের চালকদের দুর্দিন :'১৫ দিন ধইরা কামাই রুজি নাই, টিপ-টুপ নাই, ভাড়ার কোনো আলাপ-টালাপও অর না, বেকার ঘুরতাছি, তাহিরপুর ঘাটে ৫০টির মতো নৌকা বওয়াত (বসা), হকলেরঔ এক অবস্থা।'
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী বিলাসবহুল ট্রলার 'টাঙ্গুয়া নৌ পরিবহনে'র চালক দিলশাদ মিয়ার মন্তব্য এটি। টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটক আকর্ষণীয় ট্রলার 'আবিদা এ-তাহা' ও 'সিন্দাবাদের' চালকও একই ধরনের মন্তব্য করলেন।
দিলশাদ মিয়া জানালেন, পর্যটক না আসায় ট্রলারের শ্রমিক, বাবুর্চি, রেস্ট হাউস, হোটেল শ্রমিক- সবারই খারাপ দিন যাচ্ছে। হাজারো মানুষ বেকার রয়েছেন।
বিশ্বম্ভরপুরের পর্যটনস্পট পাহাড় বিলাসে আসা পর্যটকদের ছবি তুলেই জীবিকা মথুরকান্দির শাহীন আলমের। ভারি বৃষ্টি, বজ্রপাত ও পাহাড়ি ঢল নামা শুরু হতেই পর্যটক আসা একদম কমে গেছে বলে জানালেন তিনি।
পাহাড়ি ঢলে দোয়ারাবাজারের পর্যটক আকর্ষণীয় স্থান মুক্তিযুদ্ধ উপত্যকা হিসেবে পরিচিত বাঁশতলায় যাতায়াতের সড়ক চলাচল অনুপযোগী হয়ে আছে। ব্রিটিশ সড়কের ঢালাইয়ের নিচের মাটি সরে গেছে। মাঝেরগাঁও থেকে ফকিরেরপুল সেতুর অংশ পর্যন্ত চার স্থানে ভেঙেছে। এতে ওইদিক দিয়ে পর্যটকদের যাওয়ার কোনো উপায় নেই।
সুনামগঞ্জে রেস্ট হাউস এবং হোটেল ব্যবসায়ও মন্দাভাব। শহরের পুরোনো বাসস্টেশনের হোটেল রয়েল ইনের ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বললেন, এত বড় হোটেল, বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে দিনে ৪-৫টির বেশি কক্ষ ভাড়া হচ্ছে না।
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারের ক্ষেত্রে পর্যটকদের যাতায়াতের সড়ককে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির বললেন, এখন আবহাওয়া ভালো। হাওরেও টইটম্বুর পানি। ইচ্ছা করলে ভ্রমণপিপাসুরা আসতে পারেন।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকালের সিলেট ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার ফয়সল আহমদ বাবলু, গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি জাকির হোসেন ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি পঙ্কজ দে)
মন্তব্য করুন