- সারাদেশ
- পাল্টে যাবে মাগুরার কৃষি অর্থনীতি
পাল্টে যাবে মাগুরার কৃষি অর্থনীতি
শুধু লিচু চাষিদেরই বাড়তি আয় হবে ৫০ কোটি টাকা

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বদলে যাবে মাগুরার কৃষি অর্থনীতি। শুধু মাগুরার লিচু চাষিরাই আগামী বছর থেকে প্রতি মৌসুমে অন্তত ৫০ কোটি টাকা বাড়তি আয় করতে সক্ষম হবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
মাগুরা দেশের অন্যতম লিচু উৎপাদনকারী জেলা। মাগুরা পৌর এলাকার কিছু অংশসহ সদর উপজেলার চার ইউনিয়নে সাড়ে ৬০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় হাজরাপুরীর পাশাপাশি বোম্বাই, মোজাফফর, চায়না থ্রিসহ নানা জাতের লিচু চাষ করা হয়। এসব এলাকার অধিকাংশ কৃষক পরিবারের জীবন-জীবিকা লিচু চাষের ওপর নির্ভরশীল।
এ বছর লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগায় ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ। ফলে বর্তমানে লিচু চাষিরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে বাধ্য হয়ে কম দামে লিচু বিক্রি করছেন। লিচু চাষিরা এক হাজার ভালো মানের লিচু বর্তমানে গড়ে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। প্রথমদিকে বিক্রি হয়েছে আরও কম দামে, ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। তবে পদ্মা সেতু চালু হলে সরাসরি বাজারজাতকরণের মাধ্যমে আগামী বছর থেকে লিচু চাষিরা প্রায় দ্বিগুণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন বলে মনে করছেন চাষি ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
সদরের হাজরাপুর এলাকার লিচু চাষি কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি ছয় বিঘা জমিতে স্থানীয় হাজরাপুরি জাতের লিচু চাষ করেছেন। গুণে-মানে ভালো হওয়ায় সারাদেশে এ লিচুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ বছর লিচুর ভালো ফলন হলেও তিনি পাইকারদের কাছে অনেক কম দামে (১২০০ টাকা হাজার) লিচু বিক্রি করেছেন। কারণ লিচু পচনশীল হওয়ায় খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তিনি তা ঢাকার বাজারে নিয়ে সরাসরি বিক্রি করতে পারেননি। পদ্মা সেতু চালু হলে আগামী বছর তিনি সরাসরি ঢাকায় লিচু বিক্রি করে দ্বিগুণের বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
সদরের শিবরামপুর গ্রামের লিচু চাষি ইদ্রিস আলী বলেন, তার পাঁচটি লিচুবাগান রয়েছে। এতে মোজাফফর জাতের অত্যন্ত ভালো মানের লিচু ফলেছে। তিনি তাঁর আড়াই লাখ লিচু পাইকারদের কাছে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে ঢাকায় নিয়ে এ লিচু তিনি দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে পারতেন। পদ্মা সেতু চালু হলে আগামী বছর থেকে তিনি সরাসরি ঢাকার বাজারে লিচু বিক্রি করে অধিক লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াৎ মাহমুদ বলেন, চলতি মৌসুমে জেলা সদরের চাষিরা প্রায় ৫০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকার বাজারে এ লিচু প্রায় ১০০ কোটি টাকায় বিক্রি হবে।
ড. হায়াৎ মাহমুদ বলেন, লিচুর পাশাপাশি মাগুরায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি, ১২ হাজার হেক্টরে পেঁয়াজ ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জমিতে কাঁচামরিচের চাষ হয়। প্রতিদিন মাগুরা পাইকারি বাজার থেকে ৮-১০ ট্রাক সবজি, মরিচ ও পেঁয়াজ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। কিন্তু ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় অনেক সবজি বা কৃষিপণ্য ফেরিঘাটেই নষ্ট হয়ে যায়। পদ্মা সেতু চালু হলে মাগুরার কৃষি অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে।
মন্তব্য করুন