চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বি এম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পোশাকের আনুমানিক মূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার (প্রায় ২৬০ কোটি টাকা)। সেখানে ৮টি ব্র্যান্ডের পোশাক ছিল। ব্র্যান্ডগুলো ৮০টি কারখানা থেকে এ সব পোশাক সরবরাহ করেছিল। ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে— এইচ অ্যান্ড এম, গ্যাপ, টার্গেট, সি অ্যান্ড এ, এফ-লজেস্টিকস, ফিট লজেস্টিকস, গ্লোরি ও ডিএইচএল। 

কারখানা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। 

জানানো হয়, পোশাক বোঝাই ৬০টি কনটেইনার অক্ষত আছে। কনটেইনারের ভেতরে পোশাক পণ্যেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে এগুলো পোশাক জাহাজীকরণ করা যাবে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট রকিবুল আলম চৌধুরী সমকালকে বলেন, সরবরাহকারী কারখানাগুলোর তথ্যের ভিত্তিতে আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। কারখানার দেওয়া তথ্যের সঙ্গে কাস্টমস এবং শিপিং লাইনগুলোর তথ্য মিলিয়ে ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব করার চেষ্টা করছি আমরা। 

তিনি জানান, প্রায় ধংসপ্রাপ্ত কন্টেইনার ডিপোতে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ৬০টি কনটেইনার পেয়েছেন তারা। এগুলোতে পোশাক পণ্য রয়েছে। এসব পণ্যে আগুনের ছোঁয়া লাগেনি। এগুলো রপ্তানিতে কোনো বাধা নেই। অন্য ডিপোর মাধ্যমে পণ্যগুলো জাহাজিকরণে ক্রেতাদের সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। যাতে ক্রেতারাও কিছুটা কম ক্ষতিগ্রস্ত হন।

রপ্তানিচুক্তি অনুযায়ী পণ্য বুঝে পাওয়ার পর সব দায়-দায়িত্ব ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের। রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা সীতাকুণ্ডে বি এম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিদুর্ঘটনায় বিনস্ট হওয়া সব পোশাক পণ্য ক্রেতা প্রতিনিধিরা বুঝে নিয়েছে। সে হিসেবে ক্রেতারা দর পরিশোধ করবেন। ক্রেতারা বীমার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পাবেন। ইতোমধ্যে সুইডেনভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচ অ্যান্ড এমের পক্ষ থেকে বিনষ্ট পোশাকের মূল্য পরিশোধের কথা জানানো হয়েছে। ডিপোতে থাকা মোট পোশাকের মধ্যে ৫০ শতাংশই ছিল এইচঅ্যান্ডএমের।

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম জানান, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের নিয়ম হচ্ছে, ক্রেতারা পণ্য বুঝে নেওয়ার পর সব দায়দায়িত্ব তাদেরই থাকে। 

তিনি বলেন,তারা যখন কাঁচামাল আমদানি করেন সেখানেও একইভাবে দায়-দায়িত্ব নেন। সীতাকুণ্ডে বি এম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিদুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ওই দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এইচঅ্যান্ডএম যখন মূল্য পরিশোধের ঘোষণা দিয়েছে তখন বাকিরা নিয়মের কোনো ব্যত্যয় করবেন বলে মনে হয় না। কারণ, বাকিদের পণ্য খুব বেশি বিনষ্ট হয়নি। তা ছাড়া বীমার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা তো আছেই।

পোশাক ব্র্যান্ড জি স্টারের বাংলাদেশে কান্ট্রি ম্যানেজার সাফিউর রহমান সমকালকে বলেন, সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশের পোশাক বাণিজ্যে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর বাস্তবতা সারা বিশ্বের সংশ্লিষ্টদের কারো অজানা নয়। যে কোনো ঘটনা কীভাবে সামাল দিতে হয় সে কৌশল এ দেশের উদ্যোক্তাদের জানা আছে।