- সারাদেশ
- যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

এমদাদুল হক লালু।
যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রী রোকসানা খাতুনকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে স্বামী এমদাদুল হক লালুকে (৪০) মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে শেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়র জজ) মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামি উপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত এমদাদুল শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের মুকছেদপুর গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে।
শেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আসামি এমদাদুল তার স্ত্রী ছয়ঘরি পাড়া গ্রামের আ. রশিদের মেয়ে রোকসানা খাতুনের কাছে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। ওই টাকা না পেয়ে ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্ত্রীর মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করেন। মাথায় আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারালে স্ত্রীর মুখে বিষ ঢেলে প্রচার করেন যে, রোকসানা বিষ খেয়েছেন। পরে তাকে শেরপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যান। পরদিন ৭ সেপ্টেম্বর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রোকসানা।
নিহত রোকসানার ভাই নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, বিয়ের পর থেকেই রোকসানাকে নির্যাতন করতেন এমদাদুল। একদিন বোন আমাকে জানায়, ২ লাখ টাকা না দিলে এমদাদুল তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে। আমি তখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে চাকরি করতাম। ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খবর পেলাম রোকসানা বিষ খেয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আমার বোন আত্মহত্যা করবে। পরদিন শেরপুর সদর হাসপাতালে এসে দেখি বোনের মাথায় গুরুতর জখম রয়েছে। চিকিৎসক হিসেবে নিশ্চিত হই যে, মাথার আঘাতেই সে জ্ঞান হারিয়েছে। বুঝতে পারলাম আমার আদরের ছোট বোনটিকে বাঁচানো যাবে না। ওইদিন রাতেই সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল।
এ ঘটনায় ডা. গোলাম মোস্তফা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে সুরতহাল, ময়না তদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টে দেখা যায়, বিষক্রিয়ায় মারা যাননি রোকসানা। মাথা ও শরীরে গুরুতর আঘাতেই তিনি মারা গেছেন। তার মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হলেও তা মুখেই ছিল, পেটে যায়নি।
তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি শেরপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বামী এমদাদুল হক লালকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সাক্ষ্য দেন চিকিৎসক, তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১০ জন।
আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণে বিচারক নিশ্চিত হন যৌতুকের জন্য স্ত্রী রোকসানাকে হত্যা করেছেন এমদাদুল হক লালু। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের দণ্ডবিধি (১১ক) ধারায় তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
মন্তব্য করুন