কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে আজই প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তিন মেয়র প্রার্থীর পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছেই। রাজনৈতিক মেরূকরণ ও নানা বাস্তবতায় তিন মেয়র প্রার্থীরই ভাবনার কেন্দ্রজুড়ে রয়েছেন কুমিল্লা সদরের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে প্রতিদ্বন্দ্বী তিন মেয়র প্রার্থী অকপটে বলেছেন তাঁদের ভাবনা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাব্বির নেওয়াজ

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রাথী হিসেবে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন আরফানুল হক রিফাত। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এবারই প্রথম প্রার্থী হয়ে সাক্কুর দুই মেয়াদের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছেন তিনি

সমকাল: নির্বাচনী ইশতেহার দিলেন না কেন?

রিফাত: প্রতীক পেয়েই আমি আমার ইশতেহার, বিজয়ী হলে কী করব, সবই লিফলেট আকারে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেছি।

সমকাল: সাবেক মেয়র সাক্কুর দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দুর্নীতির প্রমাণ আছে আপনার কাছে?

রিফাত: আমি দায়িত্ব নিয়েই কথা বলেছি, সাক্কু ১০ বছরে যে দুর্নীতি করেছে, আমি বিজয়ী হলে প্রমাণসহ সব প্রকাশ করব।

সমকাল: বিজয়ী হলে প্রথমে কোন কাজটি করবেন?

রিফাত: একটি কথা আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, যানজট, জলাবদ্ধতা দূর করাই হবে আমার প্রথম কাজ। এ ছাড়া নগর ভবন হবে দুর্নীতিমুক্ত। নগর অফিসকে আমি দলীয় কার্যালয় বানাব না।

সমকাল: সাক্কুর অভিযোগ, এমপি বাহারের সহায়তায় আপনি ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তার করে ফলাফল নিজের পক্ষে নিতে চাইছেন।

রিফাত: সাক্কু তো বিএনপি করে, এ হচ্ছে নালিশ পার্টি। সাক্কুর সব অভিযোগ বোগাস (বানোয়াট)।

সমকাল: সদরে আওয়ামী লীগে কোন্দলের কারণে টানা দুইবার নৌকা পরাজিত হয়েছে। সেই কোন্দল এবার ভোটে প্রভাব পড়বে কিনা?

রিফাত: আমি তা মনে করি না। ২০১৭ সালে নৌকা নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন এমপি সীমা। এবারও তিনি ও তাঁর ভাই ইমরান মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাঁরাও এবার নৌকার পক্ষে আছেন। তাই নৌকার বিজয় প্রশ্নে কোনো কোন্দল আছে বলে মনে করি না।

সমকাল: মাদক ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষকদের সরকারি তালিকায় আপনার নাম কীভাবে এলো?

রিফাত: নির্বাচনে আমি প্রার্থী হওয়ার পর, বিশেষ করে প্রতীক বরাদ্দের দু'দিন পর আকস্মিকভাবে এ বিষয়ের অবতারণা করা হলো। আগে কেন হলো না?

দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমার বিরুদ্ধে অতীতে কখনও মাদকের কোনো মামলা হয়নি, নিজেও আমি কোনো মাদক গ্রহণ করি না। কোনো মাদক ব্যবসায়ীকে প্রশ্রয়ও দিইনি কোনোদিন। কোনো সরকারি সংস্থা আমাকে কখনও এ বিষয়ে ডাকেও নাই। আমাকে মাদক তালিকায় সংযুক্ত করার বিষয়টি পুরোপুরি ষড়যন্ত্র। এর সঙ্গে আমি কোনোভাবেই সংযুক্ত নই। এ তালিকায় নাম ঢুকিয়ে যেসব গণমাধ্যম মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আমি আদালতে মামলা করেছি।

সমকাল: সাক্কুর দুই মেয়াদে ১০ বছরের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

রিফাত: তিনি একজন ব্যর্থ মেয়র। কুমিল্লা নগরীকে ধ্বংস করে ফেলেছেন। পরিকল্পিত নগরী গড়ার কোনো কাজই করেননি। নগরবাসীকে কোনো সুখবর দিতে পারেননি। যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে তা-ও অপরিকল্পিত। তাই এসব উন্নয়ন জনগণের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরীর এত এত উন্নয়ন হলে এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরী পানিতে ডুবে যাওয়ার কথা নয়। রাস্তার পাশে ফুলবাগান করলেই একে উন্নয়ন বলে না।

সমকাল: যাঁরা নৌকার প্রার্থী ছিলেন, তাঁরা শেষ সময়ে এসে মাঠে প্রচারণায় নেমেছেন। এতে ভোটের মাঠে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা?

রিফাত: যাঁরা নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। তাঁরা এত প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে কাজ না করলেও নৌকার বিরুদ্ধে তো কাজ করেননি। তাই আমার বিশ্বাস, ১৩ নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী দেরিতে মাঠে নামায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

সমকাল: বহিরাগত লোকজন মাঠে নামিয়ে ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করতে পারেন- এমন অভিযোগ করেছেন আপনার প্রতিপক্ষ দুই প্রার্থী। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

রিফাত: এ অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। মাঠে তো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রচুর সদস্য থাকবে, এমনটি তো হওয়ার সুয়োগ নেই। আসলে ওরা নিশ্চিত পরাজয় দেখে বেসামাল হয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে।

সমকাল: বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী?

রিফাত: ইনশাআল্লাহ শতভাগ আশাবাদী। কোনো অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র নৌকার বিজয় ঠেকাতে পারবে না।