
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে আজই প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তিন মেয়র প্রার্থীর পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছেই। রাজনৈতিক মেরূকরণ ও নানা বাস্তবতায় তিন মেয়র প্রার্থীরই ভাবনার কেন্দ্রজুড়ে রয়েছেন কুমিল্লা সদরের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে প্রতিদ্বন্দ্বী তিন মেয়র প্রার্থী অকপটে বলেছেন তাঁদের ভাবনা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাব্বির নেওয়াজ
মনিরুল হক সাক্কু দুইবারের মেয়র। তার আগে আগে বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভার দুইবারের চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। এ বছর স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচনে লড়ছেন। এরই মধ্যে তাঁকে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে
সমকাল: দায়িত্ব পালনে নিজেকে সফল মনে করেন?
সাক্কু: আমি পৌরসভার প্রথম উপনির্বাচনে ২০০৫ সালে চেয়ারম্যান হই। পরে পুনরায় নির্বাচনে চেয়ারম্যান হয়ে মামলার কারণে দুই বছর চেয়ারে বসতে পারিনি। মেয়র হয়ে গত ১০ বছরে নগরীর অনেক উন্নয়ন করেছি। ১০ বছরের সিটি করপোরেশন- এমন কী আর বয়স! প্রথম দিকে অর্থ সংকট বেশি ছিল। ধীরে ধীরে অর্থ সংকট দূর হয়েছে। এখন অনেক অর্থ বরাদ্দ আছে। প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সহায়তায় দুই দফায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। আমি বিজয়ী হই আর যে-ই বিজয়ী হোক, আসন্ন নির্বাচনের পর কাজ শুরু হলে সিটিতে বড় কোনো সমস্যা থাকবে না।
সমকাল: নগরীর জলাবদ্ধতা ও যানজটের বিষয়টিই সর্বমহলে আলোচিত। এটা কি আপনার ব্যর্থতা নয়?
সাক্কু: পৃথিবীর এমন কোন দেশ আছে, যেখানে অতিবৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হয় না? এ ছাড়া নগরীতে পানি জমে থাকার আসল কারণ হচ্ছে কুমিল্লা-নোয়াখালী চার লেন করতে গিয়ে নগরীর পানিপ্রবাহের খাল আমাদের না জানিয়েই হঠাৎ ভরাটের মাধ্যমে ১০ ফুট করে ফেলা হয়েছে। এখন এ জন্যও পানিপ্রবাহে সমস্যা হচ্ছে। যানজট সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে নগরীর রাস্তাঘাটের তুলনায় অধিক রিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। এ জন্য সিটি করপোরেশনের একার কিছু করা সম্ভব নয়। এ জন্য জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের সঙ্গেও আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। কারও কাছে এমন ম্যাজিক নেই যে রাতারাতি যানজটমুক্ত করে ফেলতে পারবে। মুখে অনেক কথা বলা যায়, বিভিন্ন কারণে অনেক কথার বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।
সমকাল: আপনি বিএনপি পরিবারের লোক। কিন্তু নির্বাচনের সময় এভাবে হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল করা, দল থেকে পদত্যাগ করেই নির্বাচন করা বেশি জরুরি ছিল?
সাক্কু: নগরীতে আমার প্রায় ৪৫ বছরের রাজনৈতিক অঙ্গনে কর্মকাণ্ড। দলকে ভালোবাসি। দলের নীতি-আদর্শ থেকেও বিচ্যুত হইনি। দল নির্বাচনে না এলেও আমার কর্মী-সমর্থকদের অনুরোধে ভোটে আসতে হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের কথা আমাকে রাখতে হয়েছে।
সমকাল: আপনাদের দল বিএনপি থেকে নিজাম উদ্দিন কায়সারও প্রার্থী হয়েছেন। এতে ভোটের মাঠে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা?
সাক্কু: নিজাম তো আমার ছোট ভাইয়ের মতো। তার বয়স কত? ভিক্টোরিয়া কলেজে তার রাজনৈতিক শিক্ষা তো আমার হাতে। কুসিকে দুই লাখের বেশি ভোটার। এসব ভোটার পর্যন্ত পৌঁছা নিজামের সক্ষমতা আছে বলে মনে হয় না। তাই সে কত ভোট পাবে, এ নিয়ে চিন্তা করি না।
সমকাল: আপনার প্রতিপক্ষ নৌকার প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, তিনি বিজয়ী হলে সিটি করপোরেশনে আপনার সময়ের সব দুর্নীতি বের করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন।
সাক্কু: তিনি (রিফাত) তো একজন প্রার্থী। তাঁর এ সময়ে আমার পেছনে লেগে না থেকে নগরবাসীর জন্য কী করবেন, এগুলো আগে প্রকাশ করা উচিত ছিল। আমি দুর্নীতি করলে গত ১০ বছর দুদকসহ অনেক সংস্থাই তো আছে, তারা তদন্ত করে দেখতে পারত। এখন নির্বাচনের সময় এসব কথা আসছে কেন?
সমকাল: কানাডার বেগমপাড়ায় আপনার বাড়ি আছে বলে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন আপনার প্রতিপক্ষ। এ বিষয়ে কী বলবেন?
সাক্কু: আমি ও আমার স্ত্রী এরই মধ্যে এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেছি। কেউ পারলে তা প্রমাণ করতে বলেছি। যারা এত কিছু জানে, তাদের তো বাড়ি নম্বর ও রোড নম্বর জানার কথা। আমার একটি মাত্র মেয়ে। স্বামী সেখানে লেখাপড়া করছে। তাই ওরা সেখানে একসঙ্গে আছে। আমিও তো চাই মেয়েটাকে নিয়ে দেশে থাকি। বিদেশে বাড়ি করব কেন?
সমকাল: আগের দুটি সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে এমপি বাহারের আপনার প্রতি আলাদা নেকনজর ছিল। তাই নির্বাচনের পরও এমপি বাহারের সহায়তা ও পরামর্শে নগর ভবনের কাজ পরিচালিত হতো। এটা কি সঠিক।
সাক্কু: কোন্দল তো আমার দলেও ছিল, এখনও আছে। আমি বিএনপি ও সাধারণ ভোটারদের রায়ে বিজয়ী হয়েছি। এখানে আওয়ামী লীগের ভোটে আমি জয়ী হয়েছি, তা সঠিক নয়। সরকারি দলের এমপি হিসেবে উন্নয়নকাজের স্বার্থে এমপি বাহার ভাইয়ের পরামর্শ-সহায়তা নিয়েছি। এটা মিথ্যা বলব না।
সমকাল: ভোটের মাঠে সার্বিক অবস্থা কেমন দেখছেন? কতটুকু আশাবাদী?
সাক্কু: নির্বাচন কমিশন মুখে যা বলছে, বাস্তবে এর ফল দেখছি না। কয়েক দফায় অভিযোগ দিয়ে এবং ইসির চিঠির পরও এমপি বাহার ভাই এখনও কুমিল্লা ছাড়েননি। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। আশা করি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কুমিল্লায় এসে তাঁর দেওয়া কথা বাস্তবায়ন করবেন। নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ।
মন্তব্য করুন