- সারাদেশ
- পদ্মা সেতু উদ্বোধন ঘিরে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা রয়েছে
সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের
পদ্মা সেতু উদ্বোধন ঘিরে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা রয়েছে

আর কয়েক দিন পরই উদ্বোধন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের টুকিটাকি কাজ। রোববার মাওয়া থেকে তোলা পদ্মা সেতুর ছবি-মাহবুব হোসেন নবীন
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন সামনে রেখে দেশে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সরকার খতিয়ে দেখছে।
গতকাল রোববার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়া ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। তিনি জানান, ২৫ জুন উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপো ও ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডসহ বেশ কিছু অস্থিতিশীল ঘটনা ঘটেছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন সামনে রেখে এ ধরনের ঘটনা নাশকতা কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'অন্তর্ঘাত? হতেও পারে। সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের কাছে কিছু খবরও আছে। সম্প্রতি যে অগ্নিকাণ্ডগুলো হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়, এটা কি এমনিতেই হচ্ছে নাকি কেউ করাচ্ছে- পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আগে এ ধরনের অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা আমাদের আছে।'
পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারীদের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, 'আমরা বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, খালেদা জিয়া ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানোর চিন্তা করছি। খালেদা জিয়াকেও আমরা চিঠি দেব। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন।'
তিনি বলেন, আমন্ত্রণের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। আমন্ত্রণপত্র ছাপানো শেষ হয়েছে। বিদেশিদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার স্বপ্নের সেতু। এই সেতু বাংলাদেশের সামর্থ্য ও সক্ষমতার সেতু। এটা এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এই সেতু একদিকে সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক; অন্যদিকে আমাদের যে অপমান করা হয়েছে, তার প্রতিশোধের প্রতীক। পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার অসীম সাহসের সোনালি ফসল। সেতু নির্মাণে সব কৃতিত্ব শুধু তাঁর।
পদ্মা সেতুর টোল-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী ৩৫ বছরে সেতু বিভাগকে ৩৬ হাজার কোটি টাকা সরকারকে পরিশোধ করতে হবে। কারণ, এই সেতু করতে যে টাকা ব্যয় হয়েছে, তা সেতু বিভাগ সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। আমরা শ্রীলঙ্কার মতো ঋণ এনে ঘি খেয়ে বসে থাকি না। তবে জনগণের জন্য যে সেতু, সেই সেতুকে জনগণের জন্য বোঝা হিসেবে আমরা উপহার দেব না। তিনি জানান, এ সেতুর স্থায়িত্বকাল একশ বছর।
পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে নদীর দুই তীরে যাঁরা তাঁদের পৈতৃক ভিটেমাটি দিয়ে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, তাঁরা ত্যাগ স্বীকার না করলে এ সেতু হতো না।
এ সময় সেতু সচিব মনজুর হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর টোল আদায় ব্যবস্থাপনা শুরুতে অটোমেশন হচ্ছে না। প্রথমে ম্যানুয়ালি টোল আদায় চলবে। অটোমেশনের জন্য অন্তত ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে। অবশ্য ছয় মাস পরে অটোমেশন হলেও সেটা হবে আংশিক।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, টোল আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অটোমেশনের জন্য ছয় মাস লাগবে। এরপর তারা একটি কাউন্টারে অটোমেশন চালু করবে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নগদ টাকা এবং ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টোল প্রদান করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, শাহাবউদ্দিন ফরাজী, আনিসুর রহমান, সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন