সুস্বাদু আনারস 'হানিকুইন'। এই ফল চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে সুনামগঞ্জের হাসাউড়ার চাষিদের। এতে করে কর্মসংস্থান বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চাষিদের অভিযোগ, এ ফল চাষাবাদে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে সরকারি কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না তাঁরা।

শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুরমা। নদীটি পার হয়ে ১৫ কিলোমিটার দূরে মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড়। এ পাহাড়ের নিম্নাঞ্চলের টিলায় প্রায় ৩০ বছর আগে হানিকুইন (হাসাউড়ার আনারস হিসেবে পরিচিত) চাষাবাদ শুরু হয়। ওই গ্রামের সহোদর আবদুল খালেক ও আবদুল বারেক সামান্য জমিতে প্রথমে আনারস চাষ শুরু করেছিলেন। তাঁদের সফলতা এলাকার অন্য চাষিদের উৎসাহিত করে। হাসাউড়ার পাশের উঁচু পাহাড়ি এলাকায় এ বছর প্রায় ১৪৮ একর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। চাষির সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।

স্থানীয় চাষিরা বললেন, আনারস বাগানে পানির প্রয়োজন হয়, কিন্তু তা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকের পক্ষে খরচ মেটানো সম্ভব হয় না। প্রতি একরে চাষাবাদে ব্যয় হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আয় হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। এ এলাকায় প্রায় ১ হাজার নারী-পুরুষ এসব বাগানে সারাবছর কাজ করছেন।

হাসাউড়া গ্রামের হিরণ মিয়ার ভাষ্য, ১০-১২ বছর আগে একবার সারসহ আনারস চাষের কিছু উপকরণ দিয়ে সহায়তা করেছিল কৃষি বিভাগ। এরপর আর সহায়তা পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, চারা লাগিয়ে এক বছর পরিচর্যার পর আনারস ধরে। জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসজুড়ে আনারস বিক্রি করা যায়। তাঁদের গ্রামের প্রয়াত দুই সহোদরের দেখানো সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে চাষাবাদ শুরু করেছিলেন তিনি।

গ্রামটির বড় বাগানের মালিক যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী। তাঁর বাগান দেখভাল করেন চাষি নিতাই চন্দ্র দাস। তিনি জানান, ৪৭ কেয়ার (১৫ একরে দুই কেয়ার) জমিতে আনারস করেছেন তাঁরা। চারটি নলকূপ বসিয়ে মোটরের সাহায্যে পানি তুলে সপ্তাহে একবার সেচ দেওয়া হয়। সার দেওয়ায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। আনারস দেখলে মন জুড়িয়ে যায়- বললেন এই চাষি। তিনি জানান, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও সাচনা বাজারের পাইকাররা এসে আনারস কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় ১০০ আনারস বিক্রি করছেন তাঁরা। কোনো কোনো পাইকার অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন, এখন নিচ্ছেন।

আনারসের চাষ বাড়াতে হলে টিলায় গভীর নলকূপ বসাতে হবে এবং সারসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা করলে আবাদ বাড়বে বলে জানিয়েছেন নিতাই চন্দ্র। এতে বাড়বে কর্মসংস্থন। তিনি দাবি করেন, সড়ক চলাচল উপযোগী করার পাশাপাশি বাগানের ভেতরের সড়কগুলো মূল সড়কের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তাহলে ক্রেতারা সহজে আনারস বহন করে নিতে পারবেন, দামও ভালো পাওয়া যাবে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন টিপু বলেন, দেশের সবচেয়ে সুস্বাদু আনারস হানিকুইন হাসাউড়া ও শ্রীমঙ্গল ছাড়া অন্য কোথাও হয় না। এ আনারসের বাজার সিলেট ছাড়িয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় হচ্ছে। তবে সিলেট অঞ্চলে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাঁদের হিসাবে এ বছর আড়াই কোটি টাকার আনারস বিক্রি করতে পারবেন চাষিরা। গত বছর বিক্রি হয়েছিল দুই কোটি ২০ লাখ টাকার।

গত প্রায় ১০ বছর আনারস চাষিদের পরামর্শ ছাড়া কোনো সহায়তা দেওয়া যায়নি বলে স্বীকার করেছেন এই কৃষি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, চাষিদের সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিএডিসির উদ্যোগে সেচ কমিটির আগামী সভায় এ নিয়ে কথা বলবেন তিনি।