- সারাদেশ
- সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডিতেই জায়গা 'পছন্দ' চীনের
চট্টগ্রামে বার্ন হাসপাতাল নির্মাণ
সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডিতেই জায়গা 'পছন্দ' চীনের

ছবি: ফাইল
প্রস্তাবটি সেই ২০১৪ সালের। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে সায় দিয়ে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায় চীন। দিনটি ছিল ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আশপাশে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের অভিপ্রায়ে সম্ভাব্য জায়গা পরিদর্শনে চীন সরকারের প্রতিনিধি দল চট্টগ্রামে আসে প্রথমবার। এরপর একে একে চীনা প্রতিনিধি দল চট্টলায় আসে কয়েকবার। তবে হচ্ছিল না কাজের কাজ। ২০২০ সালের ২০ জুলাই, আঁধার ফুঁড়ে একটু আলোর দেখা। ওই দিন চীন সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে 'বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন হাসপাতাল' নির্মাণের পাল্টা প্রস্তাব দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত। এরপর জায়গা পছন্দ না হওয়াসহ নানা ছুতায় নিভে যায় প্রত্যাশার পিদিম। সব মিলিয়ে জায়গা পরখ করতে করতেই চীনাদের কেটে গেছে আট বছর। এখনও দাঁড়ায়নি চট্টগ্রামের প্রতীক্ষিত বার্ন হাসপাতাল।
সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো ট্র্যাজেডির পর চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি আবার আলোচনায়। এই প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ গত শনিবার বিনিয়োগে আগ্রহী চীনের একটি প্রতিনিধি দল চমেক হাসপাতালের ভেতরে প্রস্তাবিত চারটি স্থান ফের পরিদর্শন করে। সব শেষ তথ্য বলছে, চমেক হাসপাতাল ঘিরে চারটি জায়গার মধ্যে গোঁয়াছি বাগানের প্রধান ছাত্রাবাসের পেছনে খালি জায়গাটি প্রাথমিকভাবে 'পছন্দ' করেছে চীন। এদিকে সীতাকুণ্ডে এত প্রাণহানির পর কেন চীন সরকারের জায়গা পছন্দ হলো- এমন প্রশ্নের উত্তর মেলেনি সংশ্নিষ্ট কারও কাছে।
পূর্ণাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল থাকলে হতো না এত প্রাণহানি :সীতাকুণ্ডের বিস্ম্ফোরণে দগ্ধদের সেবা দিতে চিকিৎসকদের রীতিমতো হতে হয়েছে গলদঘর্ম। ভয়াবহ এই আগুন-বিস্ম্ফোরণ নতুন করে জানান দিয়েছে চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা। চট্টগ্রামের বিশিষ্টজন বলছেন, পূর্ণাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল থাকলে সীতাকুণ্ডের ঘটনায় এত মানুষের প্রাণহানি হতো না। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকের জীবন পড়ত না হুমকিতে। ওই বিস্ম্ফোরণে দগ্ধদের অধিকাংশেরই পুড়েছে শ্বাসনালি। এতে ফুসফুসে অনেক বেশি ক্ষতির কথা বলছেন চিকিৎসকরা। তবে শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই পুরো চট্টগ্রামে। এমন পোড়া রোগীর জন্য তাৎক্ষণিক প্রয়োজন হয় আইসিইউ সেবার। এটিরও নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।
বৃহত্তর চট্টগ্রামে শুধু চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পোড়া রোগীদের জন্য রয়েছে ২৬ সাধারণ শয্যা। এখানে একটু বেশি দগ্ধ রোগীর জন্য নেই পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুযোগ। এ কারণে সামান্য দগ্ধ রোগীদেরও উন্নত সেবা নিতে ছুটতে হয় ঢাকায়। আর চট্টলা থেকে এতদূরের পথ পাড়ি দিতেই অ্যাম্বুলেন্সে প্রাণ যান অনেক রোগীর। এই দুর্দশা থেকে বের হতে চান দেশের দ্বিতীয় রাজধানীর মানুষ।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, 'মানুষের মৃত্যুর পর প্রশাসনের টনক নড়ার বিষয়টি এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো, প্রশাসন এতদিন কোথায় ছিল? এত বছরেও কেন বার্ন হাসপাতাল বাস্তবায়ন হলো না? এক কথায়, সদিচ্ছার অভাবেই আলোর মুখ দেখেনি জনগুরুত্বপূর্ণ বার্ন হাসপাতালটি।'
চট্টগ্রামের নাগরিক আন্দোলন নেতা মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'নানা ছুতায় চট্টগ্রামে একটি বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের কাজ দেড় দশকেও বাস্তবায়ন করা যায়নি। অগ্নিদুর্ঘটনাও সাম্প্রতিক সময়ে তুলনামূলক বেড়েছে। অথচ দগ্ধ রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুযোগ এখনও সৃষ্টি হয়নি।'
চট্টগ্রাম সফরে এসে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, গুরুতর দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই চট্টগ্রামে। সীতাকুণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ কয়েকজনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের ঢাকায় পাঠাতে হয়েছিল। চট্টগ্রামে ১০০ শয্যার একটি স্বতন্ত্র বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল অচিরেই হবে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, 'অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে আমরা দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছি। জরুরি ও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুযোগ না থাকায় একটু বেশি দগ্ধ রোগীদের ঢাকায় পাঠানো ছাড়া উপায় থাকে না। পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুযোগ থাকলে সীতাকুণ্ডে আহত অনেককে চিকিৎসা দিতে এত বেগ পেতে হতো না।'
চমেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'শয্যার চেয়ে রোগীর চাপ সব সময় কয়েক গুণ বেশি থাকে। এর মধ্যে কোনো বড় ঘটনা ঘটলে অনেক রোগীকে চিকিৎসা দিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। মুমূর্ষু অনেককে পাঠাতে হয় ঢাকায়। অনেক দগ্ধ রোগীর আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হয়েছিল। তবে সেই সুবিধা আমাদের নেই। রোগীর তুলনায় আমাদের নেই পর্যাপ্ত জনবল।'
মন্তব্য করুন