- সারাদেশ
- পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি রৌমারীর ৪৯ গ্রামের মানুষ
পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি রৌমারীর ৪৯ গ্রামের মানুষ

পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অসুস্থ সন্তানকে ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবিটি সোমবার উপজেলার কাশিয়াবড়ি এলাকা থেকে তোলা - সমকাল
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারতের আসাম রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার ৪৯ গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষ।
সোমবার উপজেলার জিঞ্জিরাম, কালোর নদী ও ধরণী নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে; তলিয়ে গেছে ৫৯২ হেক্টর জমির ফসল ও ৫৬ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক। পানি বেড়ে যাওয়ায় ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
পানিবন্দি হওয়ায় নৌকা ও কলাগাছের ভেলা দিয়ে চলাচল করছেন এসব এলাকার মানুষরা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সঙ্কট। গত তিন দিন ধরে এসব এলাকা পানিবন্দি থাকলেও কোনো ধরনের সহায়তা না পাওয়ার দাবি এসব পানিবন্দি মানুষের।
সোমবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর, কাশিয়াবাড়ী, লালকুড়া, বিক্রিবিল, চর লাঠিয়ালডাঙ্গা, বালিয়ামারী, শ্রীফলগাতি, খেওয়ারচর, বকবান্দা, আলগারচর, পাহাড়তলী, যাদুরচর পূর্বপাড়া, তিনঘড়িপাড়া, বকবান্ধা, রৌমারী সদর ইউনিয়নের বাওয়াইরগ্রাম, ঝাউবাড়ি, দুবলাবাড়ি, পাটাধোয়াপাড়া, রতনপুর, বামনেরচর, কলাবাড়ি, বড়াইবাড়ি, নতুন চুলিয়ারচর, উত্তর বারবান্দা, মির্জাপাড়া, ইজলামারী, ফুলবাড়ি, চুলিয়ারচর, চরবারবান্ধা, ভুন্দুরচর, নয়ারচর, পশ্চিম মাদারটিলা, গোয়ালগ্রাম, চান্দারচর, খাটিয়ামারী, মাদারটিলা, পূর্বইজলামারী, কড়াইকান্দি ও ঠনঠনিপাড়া এবং শৌলমারী ইউনিয়নের গয়টাপাড়া, কলমেরচর, বেহুলারচর, চরেরগ্রাম, চরবোয়ালমারী, দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ধর্মপুর, কাউয়ারচর, ডিগ্রীরচর, পূর্বকাউয়ারচর বাঘেরহাটসহ ৪৯টি গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ভেসে গেছে জমিতে থাকা খড় ও মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে কৃষকের ধান ও পাটসহ নানা ফসলি জমি। এছাড়াও রৌমারীর নতুনবন্দর স্থলবন্দ ও বালিয়ামারী সীমান্ত হাট (বাংলাদেশ-ভারত) পানিতে তলিয়ে গেছে।
মাদারটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহিন আলম জানায়, ‘শ্রেণিকক্ষে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বিদ্যালয়ে কেউ আসছে না, তাই আমিও বিদ্যালয়ে যেতে পারছি না।’
রৌমারী সদর ইউনিয়নের চরবারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বিদ্যালয়ের চারপাশে পানি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না। এ জন্য পাঠদান বন্ধ রয়েছে।’
রৌমারী সদর ইউনিয়নের নতুন চুলিয়ারচর গ্রামের কৃষক ছক্কু মিয়া বলেন, 'কোনোমতে জমির ধান কাটতে পারলেও ধান ও খড়ও কিছুই শুকাতে পারিনি। এখন গরু খাওয়ার খড়ও নেই। গবাদিপশু নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি।’
পুরাতন যাদুরচর গ্রামের দিনমজুর সুরুজ্জামান বলেন, 'বন্যার পানিতে বাড়িঘরসহ সব ডুবে গেছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব অসহায় অবস্থায় আছি। প্রশাসনের কোনো সাহায্য এখনো পাইনি।’
যাদুরচর ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ি গ্রামের মাছ চাষি আবু সাঈদ বলেন, হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে তার তিনটি পুকুরের পাড় ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে। বের হয়ে গেছে পুকুরের সব মাছ।
যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এ ইউনিয়নের ২২ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ। এছাড়াও ২০০ বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। কোনো ত্রাণ তার কাছে পৌঁছেনি।
রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, উপজেলার ২৮ গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি তুলে ধরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাউয়ুম চৌধুরী বলেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এ পর্যন্ত উপজেলার ৫৯২ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। তার মধ্যে আউশ ধান ১৪৭ হেক্টর, পাট ২২৩ হেক্টর, ২২২ হেক্টর শাক-সবজি ও তিল তলিয়ে গেছে।
রৌমারী উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেজবাহ আলম বলেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার তিন ইউনিয়নের ৫৬ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ৩৭টি বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়ে পড়ায় সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, 'জিআরের বরাদ্দ থেকে ৩ লাখ টাকার শুকনো খাবার কেনা হয়েছে। তা দ্রুত পানিবন্দি মানুষের মাঝে সরবরাহ করা হবে।’
মন্তব্য করুন