মোবাইলটি পুড়ে গেছে। আছে শুধু কাঠামো। চশমাটিও পোড়া। আগুনের দগদগে স্মৃতি বহন করে আছে শুধু ফ্রেমটি। মানুষের ব্যবহার্য এসব পোড়া জিনিসের পাশে মিলেছে কিছু হাড়গোড়। শরীরের কিছু অংশ। কিন্তু এসব পোড়া হাড়গোড়গুলো কোনো হতভাগ্যের তা বোঝার উপায় নেই। মানুষটির বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে হয়তো খুঁজে মরছেন তার স্বজনরা। এই পোড়া হাড়গুলো যদি শনাক্ত হয়, দেহাবশেষ পাওয়ার সান্ত্বনা হয়তো মিলবে তাদের।

সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ৯ দিন পার ধ্বংসস্তূপ সরাতে গিয়ে হাড়গোড়গুলো উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার বিকেলে হাড়গোড়গুলো উদ্ধার করে তারা। শনাক্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ৭ জুন দুইটি দেহাবশেষ পাওয়া যায়।

সীতাকুণ্ড থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন সমকালকে বলেন, ‘ডিপোর পোড়া মালামালের স্তূপ থেকে কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো এক ব্যক্তির নাকি ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির বোঝা যাচ্ছে না। উদ্ধার হওয়া হাড়গুলোর মধ্যে পায়ের একটি অংশ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এগুলো ময়নাতদন্ত ও ডিএনএএ নমুনা সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সংগ্রহ করা নমুনাগুলো পরে সিআইডি ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে।’

গত শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ৯টা ২৫ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়। সাড়ে ১০টায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও ডিপোটির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। গত বুধবার পর্যন্ত এই ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৮ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে ১০ জন ফায়ার সার্ভিসকর্মী। এখনো অনেকের লাশ শনাক্ত হয়নি। লাশ শনাক্তে নেওয়া হয়েছে স্বজনদের নমুনা। আহতদের অনেকে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার ১১টার দিকে ৬১ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানায় সেনাবাহিনী। এরপর একই দিন দুপুর ২টার দিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপপরিচালক আনিসুর রহমান আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার কথা জানিয়েছিলেন। টানা ৮৬ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে গত বুধবার সকালে পুরোপুরি আগুন নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। এরপর ২৪ ঘণ্টা উদ্ধার ও ডাম্পিংয়ের কাজ করে তারা।