রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোতে সিট বাণিজ্য, হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও নিপীড়ন এবং শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা।

সোমবার সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের উত্তর পাশের প্যারিস রোডে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। এটি সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে অধিকাংশ বৈধ শিক্ষার্থী সিট পাচ্ছে না। যারা পাচ্ছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই চাঁদা দিয়ে সিট পাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ৫০ জন প্রতিবাদী শিক্ষক থাকত, তাহলে মনে হয় কেউ এসব অনিয়ম করে পার পেত না। দেশে যেসব অরাজকতা চলছে, এসবের পেছনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যদি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয় এবং তাদের কাছ থেকে যদি চাঁদা নেওয়া হয়, এর চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা আর হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, ইদানিং বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাং কিং নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কীসের র্যাং কিং? আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হোক, তারপর না হয় র্যাং কিং। যেখানে আত্মীয়তা, আঞ্চলিকতা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ হয়, সেটাকে র্যাং কিংয়ের মধ্যে ফেলবেন কী করে? দীর্ঘ ২০ বছর ধরে একই ‘চোতা’ পড়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মহান শিক্ষকরা। সেই চোতা পড়াতে পড়াতে লাল হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে কথা বললে শিক্ষকরা বলেন, নম্বর কার হাতে সেটা নিশ্চয় জানো। এভাবে দেশের শিক্ষার মান দিন দিন খুবই নিম্ন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।

এসময় আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, আমরা খবরের কাগজ খুললেই রাবিতে শিক্ষার্থী নির্যাতন, হলে সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়ার খবর দেখতে পাই। এই অভিযোগ একটি ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে। ছাত্র সংগঠনের নেতারা ছাত্রদের পক্ষে কাজ না করে চাঁদাবাজি করছে। আট-দশ বছর আগে পড়ালেখা শেষ করা অনেক আদুভাই ছাত্র সংগঠনের নেতা হয়ে হলগুলোতে থেকে এসব কাজ করছে। অছাত্র হয়ে তিনি হলে থাকছেন এবং তার অছাত্র সঙ্গীদেরও হলে রাখছেন। বর্তমান প্রশাসনের ওপর আস্থা ছিল তারা হলগুলোর দখলদারিত্ব বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু আমাদের সেই প্রত্যাশার কণাও পূর্ণ হয়নি। অবিলম্বে হলগুলো শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা আইনের মধ্যে থেকে যেন স্বাধীনভাবে চলতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. ফরিদ উদ্দীনের সঞ্চালনায় শিক্ষকদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আব্দুল্লাহ শামস, রসায়নের মাহবুর রহমান, সমাজকর্ম বিভাগের আকতার হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কাজী মামুন হায়দার, চারুকলার আব্দুস সালাম। অভিভাবকদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর আলম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল কাদরী বক্তব্য দেন।