
কাটাখালি-মোংলা বন্দর সড়কের পাশে প্রস্তাবিত একটি কারখানার সাইনবোর্ড-সমকাল
বাগেরহাটের কাটাখালি তিন রাস্তার মোড় থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। এই সড়কের দুই পাশে অন্তত ৩০টি শিল্প গ্রুপের বিশাল সাইনবোর্ড। তাদের কেউ জমিতে বালু ভরাট করে সাইনবোর্ড দিয়েছে। কারও কারও শুরু হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। তারই বিস্তারিত শোভা পাচ্ছে সাইনবোর্ডে।
পদ্মা সেতু ঘিরেই এই অঞ্চলের শিল্পপতিরা স্বপ্ন বুনছেন। কারণ স্বপ্নের এই সেতু চালুর পর রাজধানীর সঙ্গে সহজ হবে যোগাযোগ। গতি বাড়বে মোংলা বন্দরের কার্যক্রমে। এ জন্যই বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ গত তিন-চার বছর রামপাল ও মোংলায় জমি কিনেছে। এমনই আইয়ান গ্রুপ রামপালের ঝনঝনিয়া মৌজায় ১৫ একর জমি কিনে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে। খুলনার ফুলতলায় আইয়ান জুটমিল ও নগরীর বৈকালী এলাকায় গ্রুপের একটি পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণাধীন। আইয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান ফুলতলার দামোদর গ্রামের শিল্পপতি ফেরদৌস ভূঁইয়া। তাঁর ছেলে ও আইয়ান গ্রুপের পরিচালক জহির উদ্দিন ভূঁইয়া রাজিব বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর আমরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে রামপালের জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলব।
একইভাবে রামপালের ভাগা বাজার এলাকায় জমি কিনে খুলনার শিল্পপতি শেখ ফারুক হোসেন 'ফারুক জুট মিলস লিমিটেড' নামে সাইনবোর্ড দিয়েছেন। সড়কের ভেকটমারি গ্রামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে নূর গ্লোবাল মেটাল রিসাইক্লিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। মোংলার দিকে যেতে সড়কের ডান পাশে চোখে পড়বে শীতল ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেডের সাইনবোর্ড।
পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ইকবাল হোসেন জানান, মোংলায় বর্তমানে সিমেন্ট, এলপি গ্যাস, টাইলসসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় ১৫৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান পদ্মা সেতু ঘিরে তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দ্রুত নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক প্রণব কুমার রায়।
বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি লিয়াকত হোসেন সমকালকে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর কাটাখালি থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের চিত্র পাল্টে যাবে। বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান যারা আগে থেকে জমি কিনে রেখেছে, তারা শিল্পকারখানা তৈরির কাজ শুরু করবে। এরই মধ্যে অনেকে অবকাঠামো তৈরি করেছে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে। খুলনা-মোংলা রেললাইন ও রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ শেষের পথে। এখন বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ এবং রামপালের ফয়লা এলাকায় নির্মাণাধীন বিমানবন্দরের কাজ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন। আর উন্নয়নের বাড়তি চাপ সামাল দেওয়ার জন্য ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত দুই লেনের সড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মোংলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক শেখ মো. নূর আলম।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, এরই মধ্যে রাজধানীর বেশ কয়েকটি শিল্প গ্রুপ খুলনার রূপসা সেতুর বাইপাস সড়ক, রূপসা সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে কাটাখালি হয়ে মোংলা বন্দর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অনেক জমি কিনেছে। এসব স্থানে নতুন শিল্পকারখানা হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি খুলনার অর্থনীতি গতিশীল হবে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপি সমকালকে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলা বন্দর গতিশীল হবে, গড়ে উঠবে নতুন শিল্পকারখানা। মোংলা বন্দরের আশপাশে হোটেল-মোটেল গড়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হলে মোংলা বন্দরের আশপাশে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিও গড়ে উঠবে।
স্থানীয়রা জানান, পাঁচ বছরের ব্যবধানে কাটাখালি-মোংলা সড়কের পাশের জমির মূল্য কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি দাম মোংলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের দিগরাজ এলাকায়। তার পরও জমি পাওয়া যাচ্ছে না। বুড়িরডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান উদয় শংকর জানান, তাঁর এলাকায় অর্ধ শতাধিক ছোট-বড় শিল্পকারখানা তৈরি হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান আসায় জমির দাম বেড়ে গেছে।
মোংলা বন্দরের পাশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ চলছে। সেখানেও হাতছানি দিচ্ছে শিল্পায়ন। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ কারখানা স্থাপনে যোগাযোগ করছে। কিন্তু বন্দর এলাকায় যে শিল্প প্লট খালি, তা সবাইকে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে না।
মন্তব্য করুন