- সারাদেশ
- এক ইঞ্চি স্থলভাগও খুঁজে পাওয়া কঠিন
এক ইঞ্চি স্থলভাগও খুঁজে পাওয়া কঠিন
-samakal-62ae4611edb77.jpg)
বন্যায় বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় কাঁধে চড়ে আশ্রয়ের খোঁজে শিশু - সমকাল
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতিকে নজিরবিহীন বলে এরই মধ্যে আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আশপাশের জেলাও পানিতে ডুবছে। বসতভিটা ডুবে যাওয়ায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অনেকে। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্গত এলাকায় কাজ শুরু করেছেন সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা। হাই স্পিডবোট ও ডুবুরি দল নিয়ে উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছেন তাঁরা। উদ্ধারকারী দলের একাধিক সদস্য তাঁদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, 'চোখের সামনে পানি আর পানি। আমরা যেসব এলাকায় কাজ করছি ওই এলাকাসহ আশপাশে এক ইঞ্চি স্থলভাগও খুঁজে পাওয়া কঠিন। এ ধরনের পরিস্থিতি, মানুষের দুর্ভোগ এক কথায় কল্পনার বাইরে। দুর্গত এলাকা থেকে আমরা মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিচ্ছি।'
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ বলেন, বেসামরিক প্রশাসনের অনুরোধে মূলত দুর্গত এলাকায় সেনাবাহিনী ৫টি দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া, বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্বাচন এবং উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, খাদ্যগুদাম, পাওয়ার স্টেশন ও অন্যান্য স্থাপনা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং সীমিত পরিসরে খাদ্য ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। এর পাশাপাশি নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল এরই মধ্যে সিলেটে পৌঁছে গেছে। বিমানবাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন।
সিলেটে উদ্ধার অভিযানে রয়েছেন নৌবাহিনীর কমান্ডার কামরুল আবেদীন। তিনি সমকালকে বলেন, 'এখন গলাসমান পানিতে আছি। আমাদের লোকজন পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধার করছেন। টিমে ১২টি হাই স্পিডবোট রয়েছে। ডুবুরি রয়েছেন ৩৫ জন। সব মিলিয়ে নাবিকের সংখ্যা একশজন।'
তিনি আরও বলেন, 'চোখের সামনে এত পানিবন্দি মানুষ কখনও দেখিনি। তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। রোববার সুনামগঞ্জ ও জামালগঞ্জে উদ্ধার অভিযান চালানো হবে।'
সাধারণ মানুষকে উদ্ধারের পাশাপাশি সিলেটে আটকে পড়া এমআইএসটির ছয় ছাত্রকে গতকাল উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।
দুর্গত এলাকায় উদ্ধার কাজে নিয়োজিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ শহরে কোনো বাড়িতে পানি উঠতে বাকি নেই। সদরের পাশাপাশি দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলা ভাসছে বন্যায়। পানি ঢুকেছে সিলেট শহরেও। কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও সদর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা এখন পানির নিচে।
আরেক কর্মকর্তা জানান, সুনামগঞ্জের ১২টি থানাও পানির নিচে ডুবে আছে। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা উঁচু ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন।
সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, শহরের দক্ষিণ সুরমা এলাকায় তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুতের সাব-স্টেশন ডুবে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অন্ধকারে ঘরের মধ্যে অবস্থান করছে মানুষজন। শুক্রবার তিনি নিজ কার্যালয়ে গেছেন ট্রাকে চড়ে। কারণ পানি তাঁর কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে গেছে।
সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, বন্যার কারণে এই ধরনের পরিস্থিতি সচরাচর দেখা যায়নি। বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকের সঙ্গে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। মোবাইল ফোনের চার্জ দেবেন কোথায় তাঁরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জে পুলিশের নিজস্ব যোগাযোগ নেটওয়ার্কও ভেঙে পড়েছে। ওয়্যারলেসে কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। দুর্গত এলাকায় কোন ইউনিট কী অবস্থায় রয়েছে তাও জানা সম্ভব হচ্ছে না। ছাতকের ওসি নৌকায় সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে লাফার্জ সিমেন্ট কোম্পানির কার্যালয় থেকে একটি ল্যান্ডফোনে কল করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওই থানার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন।
এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে সিলেটের বন্যাকবলিত জনসাধারণকে উদ্ধার ও তাঁদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। সিলেট আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আশ্রয় নেওয়া বন্যাকবলিত ১৫০ পরিবারের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ১ হাজার পরিবারের মাঝে শুকনা খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হবে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় টোল ফ্রি নম্বর চালু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ তথ্য জানিয়েছে। নম্বরগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রামীণের ০১৭৬৯১৭৭২৬৬, ০১৭৬৯১৭৭২৬৭, ০১৭৬৯১৭৭২৬৮, রবির ০১৮৫২৭৮৮০০০, ০১৮৫২৭৯৮৮০০, ০১৮৫২৮০৪৪৭৭, বাংলালিংকের ০১৯৮৭৭৮১১৪৪, ০১৯৯৩৭৮১১৪৪, ০১৯৯৫৭৮১১৪৪ এবং টেলিটকের ০১৫১৩৯১৮০৯৬, ০১৫১৩৯১৮০৯৭, ০১৫১৩৯১৮০৯৮।
মন্তব্য করুন