শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জফির সেতুর বাড়ি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। গতকাল শনিবার দিনভর তিনি বন্যাদুর্গত মানুষের সহযোগিতায় এলাকায় এলাকায় ঘুরেছেন। সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে টেলিফোনে তিনি সমকালকে বলেন, পুরো উপজেলায় অমানবিক এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। আশ্রয়কেন্দ্র মানুষে-পশুতে একাকার। খাওয়ার পানি নেই, খাবার নেই। অসুস্থ মানুষ শুয়ে আছেন, ক্ষুধার কষ্টে বাচ্চারা কাঁদছে। চিকিৎসাসেবা পাওয়া তো দূরের কথা, খাবারই পাচ্ছেন না কেউ।'

গতকাল শনিবার সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সমকালের কাছে বেশকিছু ফোন এসেছে। কেউ নিরাপদ আশ্রয় চান, কেউ উদ্ধারকারী দলের ফোন নম্বর চান। অধিকাংশ মানুষের একটাই আকুতি, 'খাবার চাই, অনেক কষ্টে আছি।' খাদ্য, সুপেয় পানি আর চিকিৎসাসামগ্রী দ্রুত পৌঁছানো না গেলে সেখানকার মানুষ আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে।

সিলেট নগরীর যতরপুর এলাকার মুকিত মিয়ার কলোনিতে বসবাস কাওসার আজমের। তিন ছেলেসহ পরিবারের পাঁচজন মিলে মিরাবাজার এলাকার কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন গত শুক্রবার। রাতে কিছু খাননি। সকালে খাবারের সন্ধানে ছুটেও পাননি কিছু। একই আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে দু'দিন ধরে সংকটে আছেন মনসুর আলী (৭০)। তিনি বলেন, 'আশ্রয় পাইলেও খানি (খাবার) পাইলাম না। মানুষের কাছ তনে খুঁজিয়াও পাই না।'

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের সেলবরষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া বন্যার্ত আবদুল হক ক্লান্ত গলায় বলছিলেন, 'ঘরে কোমরপানি। কেতা-বালিশ লইয়া শুক্রবার সহাল থাইক্যা বাড়ির হমনের পেরাইমারি স্কুলও পোলাপান লইয়া আশ্রয় নিছি। এইহানও রান্নাবান্নার কুনু ব্যবস্থা নাইগ্যা। খালি আমরা না, এইরহম আরও অনেহেই আছে। অত কষ্টের মধ্য থাকলেও সরহার থাইক্যা অহওনও কুনু খাওন (ত্রাণ সহায়তা) ফাইতাছি না। এই রহম চলতে থাকলে আমরারে না খাইয়া মরতে অইবো।'

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পীযূষ পুরকায়স্থ টিটু টেলিফোনে সমকালকে বলেন, ৫০ লাখ মানুষ আক্রান্ত। কারও ঘরেই খাবার নেই। সবচেয়ে বিপদে আছেন নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সাপ, পোকামাকড় ও জোঁকের উপদ্রব বেড়েছে। শৌচাগার ডুবে যাওয়ায়ও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরকারিভাবে ত্রাণ দেওয়ার কথা বলা হলেও ত্রাণের দেখা মেলেনি। তিনি বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় নৌকার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে অসহায় মানুষের কাছে খুব একটা যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া খাদ্যগুদামের আশপাশে পানি থাকায় অনেক ক্ষেত্রে সেখান থেকেও খাদ্যসামগ্রী বের করা সম্ভব হচ্ছে না।