
বৃষ্টিতে বন্ধ আশুগঞ্জের চাতালের ধান টুকরি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে-সমকাল
টানা বৃষ্টিপাতে ব্যাহত হচ্ছে আশুগঞ্জের দুই শতাধিক চাতালের চাল উৎপাদন। বৃষ্টি আরও কয়েক দিন চললে নষ্ট হবে অন্তত ৭০ হাজার মণ ধান। এতে বাজারে চালের ঘাটতিসহ লোকসানের মুখে পড়বেন চাতাল মালিকরা।
জানা গেছে, এ অঞ্চলে মাসব্যাপী কয়েক দফায় টানা বৃষ্টিপাতের কারণে বেশ কয়েকটি চাতালে নষ্ট হতে চলেছে স্তূপ করে রাখা ভেজা ধান। চাতালের উৎপাদন বন্ধ থাকায় অর্থকষ্টে পড়েছেন এ খাতে নিয়োজিত 'কাজ নেই মজুরি নেই' চুক্তিতে কর্মরত প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক।
গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, বেশির ভাগ চাতালে সিদ্ধ বা আতপ ভেজা ধান মাঠে টুকরি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। চাতালের শ্রমিকরা তীর্থের কাকের মতো একটু রোদের অপেক্ষায় বসে আছেন। বৃষ্টি একটু থামলে বা রোদের আভা দেখা দিলে টুকরি থেকে ধান বের করছেন। আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব ধান টুকরির ভেতরে ভরছেন। বেশ কয়েকটি চাতালে ভেজা ধান থেকে ভ্যাপসা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, কয়েকটি আতপ চাল উৎপাদনকারী চাতালের ভেজা ধানে চারা গজানো শুরু করেছে। এসব ভেজা ও নষ্ট ধান থেকে পরে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ চাল পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া চালের মানও খারাপ হবে। নষ্ট ধান থেকে উৎপাদিত চাল হবে ভাঙা, লালচে ও দুর্গন্ধযুক্ত। ফলে বাজারমূল্যও কম হবে।
চাতাল মালিকরা জানান, এসব ভেজা ও নষ্ট ধান থেকে কমপক্ষে ২০ ভাগ চাল কম পাওয়া যাবে, চালের মানও হবে খারাপ। তারা জানান, আরও কয়েক দিন বৃষ্টি হলে ৭০-৮০ হাজার মণ ধান নষ্ট হয়ে যাবে। চাতাল মালিকদের আশঙ্কা, এতে তাঁরা মারাত্মক লোকসানে পড়বেন এবং বাজারে চালের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে।
কথা হয় চানবক্স, শাপলা, অতুল ও তুষার রাইস মিলের বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। হজরত আলী, আলম, রেজিনা, অঞ্জনা নামে কয়েকজন শ্রমিক জানান, স্বাভাবিক আবহাওয়ায় একটি চাতালে ধান শুকিয়ে চাল করার প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগে বড়জোর দুই-তিন দিন। বৃষ্টির কারণে ১০ দিনেও তা হচ্ছে না। ফলে তাঁরা কোনো মজুরি পাচ্ছেন না। তাই পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
চানবক্স রাইস মিলের ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন বলেন, চাতালে সিদ্ধ ধান রয়েছে ৫০০ মণ। এসব ধান না শুকাতে পারলে দুই দিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাবে।
তুষার রাইস মিলের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁদের চাতালে ৭০০ মণ ধান রয়েছে। ছয় দিন ধরে মাঠে ধান ভেজা অবস্থায়। ধান থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। কোনো কোনো টুকরির ধান থেকে চারা গজানো শুরু করেছে।
আশুগঞ্জ উপজেলা চাতালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল সিকদার বলেন, বৃষ্টিপাত আরও কয়েক দিন চললে প্রতিটি মাঠে গড়ে ৫০০-৬০০ মণ করে ধান নষ্ট হবে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে এবং বাজারে চালের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
ইউএনও অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, চাতালকল মালিকরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়লে যদি তাঁরা আবেদন করেন তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব।
মন্তব্য করুন