বৃষ্টি আর উজানের ঢলে নদ-নদীতে পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। 

আজ রোববার সকাল ৯টায় ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর ফেরিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরফলে আরও নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, জেলার ৯ উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নের চর, দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চলের ২৮৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামে প্রায় ২২ হাজার পরিবারের সোয়া লাখের মতো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় নৌকায় বসবাস করছেন অনেকে। আর নৌকা না থাকায় পানির মধ্যে চৌকি বা মাঁচায় ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে অনেক পরিবার। ঘরের ভেতরে পানি থাকায় খাবার রান্না করতে পারছেন না। শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে তাদের। এ অবস্থায় নৌকায় মালামাল নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন অনেকে।

এদিকে উজানের পাহাড়ি ঢলে আবারও জিঞ্জিরাম নদী উপচে রৌমারী-বড়াইবাড়ী পাকা সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই সড়কের গোয়ালগ্রাম থেকে ইজলামারী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সড়কের উপর দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। এরফলে রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাত ইজলামারী, ছোট মাদারটিলা, বড় মাদারটিলা, কোনাচিপাড়া, কড়কান্দি, মির্জাপাড়া ও নতুন চুলিয়ারচর-এই ৭ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, বন্যাকবলিত হওয়ায় জেলার ৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন, বন্যার্তদের সহায়তায় এ পর্যন্ত ৩৯৫ মেট্রিক টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং গো-খাদ্য বাবদ ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল হাসান জানান, বন্যার্তদের মধ্যে শনিবার থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে। শনিবার বিকেলে যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে ৩০০ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আজ রোববার পাঁচগাছি ইউনিয়নে ২০০ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করা হয়েছে।

প্রতি প্যাকেটে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি লবণ, ১ লিটার তেল, গুঁড়া করা হলুদ-মরিচের প্যাকেট এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে।