সিলেট নগরীর ছড়ারপারের বাসিন্দা মতিন মিয়ার বসতঘর তিনদিন ধরে প্লাবিত। তাই বাধ্য হয়ে ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে পার্শ্ববর্তী চালিবন্দরের রামকৃষ্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। এতে পানির হাত থেকে বাঁচলেও তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছে দিনমজুর মতিন মিয়ার পরিবার। রোববার সকালে তিনি বলেন, এখানে কোনো খাবার নেই। রান্নার ব্যবস্থা নেই। কেউ সহযোগিতাও করেনি। বন্যার জন্য কোন কাজ নেই, গরীব মানুষ। তাই খাবারও কিনতে পারছি না। কোনরকমে মুড়ি খেয়ে টিকে আছি।

শুক্রবার থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার পর সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার বা পানীয় জলের তীব্র সংকট। সিটি করপোরেশন স্থানীয় কাউন্সিলরদের দেখাশোনার দায়িত্ব দিলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের দেখা নেই। শুকনো খাবার সংগ্রহ করতে ব্যর্থ সিসিকও। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত শন্তু। এই কাউন্সিলের উদ্যোগে লামাবাজার ও মির্জাজাঙ্গাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া মানুষকে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।

নগরীতে আশ্রয় কেন্দ্র খুললেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সেভাবে দেখভাল করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। নগরীর মীরাবাজারে কিশোরী মোহন স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে বেশ কয়েকজন বন্যাদুর্গত উঠৈছেন। এখানেও খাদ্য সংকট রয়েছে। পানীয় জলের জন্য সিটি করপোরেশনের একটি পানির ট্যাংক রাখা হয়েছে সামনে। একইভাবে বন্যা কবলিত এলাকাবাসীর জন্যও বিভিন্ন এলাকায় পানির ট্যাংক রাখা হয়েছে। তবে কোমর বা বুক সমান পানি ঢিঙিয়ে অনেকে সেখান পর্যন্ত আসতে পারছেন না।

নগরীর ৩২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলার কথা জানালেও সেখানে কি পরিমাণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন; তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি আশ্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ও পরিবহণ শাখা) মো. রুহুল আলম। তিনি বলেন, ১৫০০ থেকে দুই হাজারের মত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এদের দেখাশোনার জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরদের বলা হয়েছে। তারা শুকনো খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করছেন। কয়েকজন রান্না করা খাবার দিচ্ছেন জানালেও কাউন্সিলর শন্তু ছাড়া কারো নাম বলতে পারেননি তিনি।

এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রে বিতরণের জন্য শুকনো খাবার পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সিসিকের প্রকৌশলী রুহুল আলম। তিনি জানান, শুকনো খাবার সংগ্রহের জন্য নগরীর কালিঘাটের পাইকারি বাজারে লোক পাঠানো হয়েছে। সেখানে অনেক দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। যেসব দোকান খোলা রয়েছে, সেখানেও চিড়া-মুড়ি-গুড় পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিস্কুট বা অন্য যেকোনো খাবার আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এ প্রতিবেদনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার সময় ওয়াকিটকিতে তিনি এমন নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।