- সারাদেশ
- ৫ দিন ধরে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন তাহিরপুর, বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি
৫ দিন ধরে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন তাহিরপুর, বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি

তাহিরপুরে বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটরের মাধ্যমে মোবাইল ফোন চার্জ দিচ্ছেন বানভাসিরা
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ১৫ জুন থেকে শুরু হয়েছিল টানা বৃষ্টি। পাহাড়ি ঢলে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক ডুবে ছিল। অন্যদিকে উপজেলার সবক’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেঝেতে পানি ওঠায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ১৭ জুন মধ্য রাতে সবাই দেখেন ঘরের চৌকির ওপর পানি। রাত পোহালেই তারা দেখতে পান সবার গলা পর্যন্ত পানি।
এ অবস্থায় বানভাসি মানুষ কাপড় গোছাবেন না বিছানাপত্র গোছাবেন নাকি গরু-বাছুর; নাকি বারালের ধান সামলাবেন। এ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তারা। রাত পোহালে চোখের সামনেই ভেসে গেছে তাদের সারা বছরের কষ্টে উপার্জিত ধান, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি।
১৫ জুন থেকে টানা ৫ দিন বিদ্যুৎ না থাকায় কারো মোবাইল কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। পানির ওপর দাঁড়িয়ে বানবাসি মানুষ জেনারেটরের সাহায্যে মোবাইল চার্জ করতে হয়েছে।

ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলে ভারত থেকে নেমে আসা যাদুকাটা, মাহারাম, রক্তি পাটলাই নদী দিয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে পানি নেমে আসায় তাহিরপুরের নিন্মাঞ্চলের ২০০টিরও বেশি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২ লক্ষাধিক মানুষ।
অন্যদিকে বড়ছরা শুল্ক স্টেশনে পাহাড়ি ছড়া দিয়ে ঢলের পানি নেমে এসে শতাধিক কয়লার ডিপো প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার কয়লা পরিবহন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
অপরদিকে নদী ও হাওরের পানি একাকার হয়ে নদীতীরবর্তী হাওরপারের গ্রামগুলো ও রাস্তাঘাট ঝোড়ো হাওয়ায় ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙনের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া খেটেখাওয়া মানুষ ও জেলেরা পাহাড়ি ঢলের কারণে মাছ ধরতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে রয়েছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত ইউনিয়নগুলো হলো উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন, শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন, বড়দল দক্ষিণ, তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন, বালিজুড়ি ইউনিয়ন ও বাদাঘাট ইউনিয়ন।
এছাড়া উত্তর বড়দল বাদাঘাট, বালিজুড়ি উত্তর শ্রীপুর ও দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় রোপা-আমন ধানের শতশত একর জমির বীজতলা ও শাকসবজির খেত ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকগণ জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সদরের মধ্য তাহিরপুর গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ শাহ আলম বলেন, কোনো কালই কাল নয়; ২০২২ এর কালই বড় কাল। ১৯৭৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যা পেরিয়ে বড় বন্যা হলো ২০২২ এর বন্যা।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক সেলিম আখঞ্জি বলেন, তার বারাল (ধানের গুদাম) বন্যার ঢেউয়ের কবলে পড়ে প্রায় ৩০০ মণ ধান পানিতে ভেসে গেছে। আনোয়ারপুর বাজারের ব্যবসায়ী মিলন তালুকদার বলেন, ঢলের পানিতে আনোয়ারপুর বাজারটি ভেঙে গেছে।
রোববার সকাল থেকে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বানভাসিদের খোঁজখবর নিচ্ছেন ও খাদ্যসহায়তা বিতরণ করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রায়হান কবির বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে তাহিরপুর উপজেলায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। রাস্তাঘাট অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। ৫ দিন ধরে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে তিনি শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
মন্তব্য করুন