খুলনায় 'ধারণাপত্র: চুকনগর গণহত্যা' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। রোববার খুলনা প্রেস ক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে 'চুকনগর গণহত্যা '৭১ স্মৃতি পরিষদ'-এর উদ্যোগে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১৯৭১ সালের ২০ মে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তাঁরা ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল সেদিন। কিন্তু জাতীয়ভাবে ওই হত্যাকাণ্ডের কোনো স্বীকৃতি নেই। ওই ঘটনা স্থান পায়নি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কোনো ইতিহাসেও।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বিশ্বের যে কোনো গণহত্যার চেয়ে এটি আরও বেশি বর্বর ছিল উল্লেখ করে ওই গণহত্যার ইতিহাসকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সংযুক্ত করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও যেন এটি স্বীকৃতি পায়, সে ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ওই গণহত্যার বর্ণনা দিয়ে স্মৃতি পরিষদের সভাপতি এ বি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর নির্যাতন শুরু করে রাজাকার বাহিনী। এ কারণে ওইসব অঞ্চলের মানুষ চুকনগর দিয়ে ভারতে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। ১৯ মে হাজার হাজার মানুষ চুকনগরে জড়ো হয়েছিল। পরদিন সকালে সাতক্ষীরা থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কয়েকটি গাড়ি এসে সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ শুরু করে।
বক্তারা বলেন, চুকনগরের গণহত্যাটি জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রয়োজন। এটি পালনও জাতীয়ভাবে করতে হবে। পাঠ্যবইতেও ব্যাপারটি অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের ওই গণহত্যা সম্পর্কে জানাতে হবে। আর তাহলেই নতুন প্রজন্ম বুঝবে কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজনীতিবিদ ও সাবেক খুলনা পৌরসভার চেয়ারম্যান এনায়েত আলী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক গৌরাঙ্গ নন্দী, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শ্যামল সিংহ রায়, মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মফিদুল ইসলাম, চুকনগর গণহত্যা '৭১ স্মৃতি পরিষদের সহসাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।