- সারাদেশ
- ভাঙনে ভিটেহারা ২ শতাধিক পরিবার
ভাঙনে ভিটেহারা ২ শতাধিক পরিবার

উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে তিস্তার পানি বাড়ছে। সেই সঙ্গে চলছে ভাঙনের তাণ্ডব। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের করাল গ্রাসে ভিটেমাটি হারিয়েছে ফুলছড়ি উপজেলার পাঁচ গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অবিরাম ছুটছেন তাঁরা।
রোববার সকাল থেকে ফুলছড়ির তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ব্রহ্মপুত্র নদের কোলঘেঁষা উড়িয়া, গজারিয়া, ফুলছড়ি, ফজলুপুর ও এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে ভাঙনের কবলে পড়েছে ফুলছড়ি ইউনিয়নের পিপুলিয়া, বাগবাড়ী, দেলুয়াবাড়ী এবং উড়িয়া ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া ও মধ্য উড়িয়া গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার।
উড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গত শনি থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত ৮৫টি পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। অনেকে আসবাব, টিনের চালা, বেড়া নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
ফুলছড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজহারুল হান্নান বলেন, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে চরাঞ্চলের পিপুলিয়া, বাগবাড়ী ও দেলুয়াবাড়ী গ্রামের ১১৫টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
এদিকে ভাঙনে দিশেহারা পরিবারগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। কোনোমতে মাথা গোজার ঠাঁই মিললেও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
মধ্য উড়িয়া গ্রামের শেফালী বেগম বলেন, এমন ভাঙন কোনোদিন দেখি নাই। সব নদীতে ভেসে গেছে। বাঁধে আশ্রয় পেলেও ছেলেমেয়েদের কী খাওয়াব সেই চিন্তায় আছি।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে বসবাসকারী আব্দুল ওয়াজেদ মিয়া বলেন, বানভাসি মানুষের কষ্ট সহ্য করার মতো নয়। কিছু লোককে আশ্রয় দিতে পারলেও খাবার দিতে পারছি না। সরকারের পক্ষ থেকে শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করলে ভালো হতো।
চর পিপুলিয়া এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নদী হামাগরে সব শেষ করি দিল। আবাদি জমি, বসতভিটাও গিলি খালো। ছোলপোল নিয়া কোনটে যামো, কোনটে থাকমো, কিছুই মাথাত খেলে না।’
উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭ ইউনিয়নের এক হাজার ২৮৫টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও তীব্র নদীভাঙনের কারণে মোট এক হাজার ১৬৫টি পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। শুকনা খাবারের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বন্যা ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ বলেন, ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী তাদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন