- সারাদেশ
- ৪২ খুঁটি নির্মাণ ছিল প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ
পদ্মা সেতু
৪২ খুঁটি নির্মাণ ছিল প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ

পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতুর ৪২টি খুঁটি নির্মাণ কাজের সফলতায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে দেশের বড় এ প্রকল্পটি। এই ৪২টি খুঁটির ওপর ৪১টি স্প্যান বসানোর মাধ্যমেই পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৪ বছর ধরে চলা নির্মাণযজ্ঞে মাঝখানে শুধু খুঁটি জটিলতার কারণে কাজ পিছিয়েছে এক বছরের বেশি সময়।
নদী তলদেশের মাটির গুণগত বৈশিষ্ট্য বদলে খুঁটি গেথেছেন সেতুর প্রকৌশলী ও নির্মাণ শ্রমিকরা। এর মধ্যে ‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’ নামের বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগ করে ২২টি খুঁটি নির্মাণের সফলতা পাওয়া যায়। ২৫ জুন উদ্বোধন হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এই সেতু পদ্মার বুকে দাঁড়িয়েছে ৪২টি খুঁটিতে। একটি খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব ১৫০ মিটার। একেকটি খুঁটি ৫০ হাজার টন লোড নিতে সক্ষম বলে প্রকল্পের প্রকৌশলীরা জানিয়েছে।
‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’র বিশেষ পদ্ধতিতে সফলতা
পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীরা জানান, মাঝ পদ্মায় ও মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ২২টি খুঁটিতে সবচেয়ে বেশি জটিলতা দেখা দিয়েছিল। প্রথমদিকে যে গভীরতার ধারণা নিয়ে কাজ এগোনো হচ্ছিল বাস্তবে তার সঙ্গে মেলেনি। এ নিয়েই বিপত্তি দেখা দেয় সেতু নির্মাণে।
পদ্মা সেতুর সহকারী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ মজুমদার শাওন বলেন, সব খুঁটি নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় অসম্ভব ভালো লেগেছে। কারণ সাব-স্ট্রাকচার অংশের এ কাজটি অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। একসময় পদ্মা সেতুর খুঁটি তৈরিতে নদীর তলদেশে মাটির জটিলতার কারণে কিছু সমস্যা হয়েছিল। পরে নকশায় কিছু পরিবর্তন এনে সেই সমস্যা দূর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, খুঁটির বেইজড গ্রাউটিং, স্কিন গ্রাউটিং ও ফুললেন্থ স্টিল পাইলিং করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর বিয়ারিং প্যাডে ভিন্নতা আছে। এছাড়া খুঁটি নির্মাণে এমন একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে, যাতে নদীর তলদেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মাটি বদলে নতুন মাটি তৈরি করে পিলার গাথা যায়। ‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’ নামের এই বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগ করা সফলতা পাওয়ার পরই ২২টি খুঁটি নির্মাণ করা হয়।
এমন পদ্ধতি বিশ্বে নজিরবিহীন
পদ্মা সেতুর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, পাইপের ছিদ্র দিয়ে বিশেষ কেমিক্যাল নদীর তলদেশে পাঠিযে মাটির গুণাগুণ শক্ত করে তারপর সেখানে খুঁটি গাঁথা হয়েছে। তারা আরও বলেন, কাজ শুরু করতে গিয়ে নদীর নিচে মাটির যে স্তর পাওয়া গেছে তা খুঁটি গেঁথে রাখার উপযোগী ছিল না। পরে নদীর তলদেশের মাটির গুণগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে ড্রাইভিং করতে হয়েছে। এমন পদ্ধতিতে কোনো সেতুর খুঁটি নির্মাণ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এবং বিশ্বে নজিরবিহীন।
পদ্মা সেতু নির্মাণের ৩ বিশ্ব রেকর্ড
প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণের ৩টি বিশ্ব রেকর্ড অর্জন করেছে বাংলাদেশ। প্রথমত, পাইলিং-পদ্মা সেতুর খুঁটির নিচে সর্বোচ্চ ১১২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়েছে। বিশ্বে কোনো সেতুর জন্য এতো গভীরে পাইলিং করা হয়নি।
দ্বিতীয়ত, ভূমিকম্প-পদ্মা সেতুতে ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে ১০ হাজার টন। যা পৃথিবীর কোনো সেতুতে নেই। ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকবে পদ্মা সেতু। তৃতীয়ত, নদীশাসন-নদী শাসনের জন্য ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এর আগে বিশ্বে নদী শাসনের জন্য এককভাবে এতো বড় দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।
প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্য
পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ৪ হাজার মেট্রিক টন ওজনের জাহাজও সেতুর খুঁটিতে দিলে জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তারপরও খুঁটির কিছু হবে না। এমনকি ২০০ বছর পর্যন্ত যেকোনো নৌযান ধাক্কা খেলেও খুঁটির কিছু হবে না, এমন ভাবেই পদ্মা সেতুর খুঁটি নির্মাণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন