- সারাদেশ
- শেরপুরে বন্যায় ভেসে গেছে সাড়ে ৩ কোটি টাকার মাছ, ৫০ লাখ টাকার মুরগি
শেরপুরে বন্যায় ভেসে গেছে সাড়ে ৩ কোটি টাকার মাছ, ৫০ লাখ টাকার মুরগি

শেরপুরে বন্যায় ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ
অবিরাম বৃষ্টির জেরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে শেরপুরের সীমান্তবতী নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় মৎস ও প্রাণীখাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসেবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকা বলা হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের হিসেব অনুযায়ী লোকসান ৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানা গেছে।
জেলা মৎস অফিস সূত্রে জানা গেছে- দ্বিতীয় দফায় গত ১৮ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ী নদী সোমেস্বরী, মহারশি, ভোগাই ও চেল্লাখালির পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে। এসময় ঢলের পানির প্রচণ্ড স্রোতে ঝিনাইগাতী উপজেলার ৩৮৭, নালিতাবাড়ী উপজেলার ৩৭৫ শ্রীবরদী উপজেলার ২৩০ ও নকলা উপজেলার ৩৯টি পুকুরসহ ১ হাজার ৩১টি পুকুর- দিঘী ও মৎস খামারের মাছ ভেসে যায়। এরমধ্যে বড় মাছের পরিমাণ প্রায় ১৯৪ মেট্রিক টন আর পোনা মাছের সংখ্যা ৪৪ মেট্রিক টন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ৭০৪ জন মৎসচাষী ও খামারের মালিক।
সরেজমিন ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় মৎস খামারি শহিদুল ইসলামের ৬টি পুকুরে মাছ ভেসে গেছে। এতে পোনা, বড় মাছ ও অবকাঠামোসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার। ক্ষুদ্র এ মৎসচাষী ভেঙে পড়েছেন। তিনি ভারাক্রান্ত হয়ে বলতে থাকেন, 'আমার সব শেষ হয়ে গেছে। ঋণ নিয়া ৬টি পুকুরে মাছ ছাড়ি। দুইটা পুকুরের মাছ অনেক বড় হইছিল। ভাবছিলাম দু’একদিনের মধ্যে তুইলা বিক্রি করমু। কিন্তু মহারশি নদীর ঢলের পানি আমার ছয়টা পুকুরের সব মাছ ভাসায়া নিছে'।
ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহাদত হোসেন বলেন- সদর ইউনিয়নে মাছচাষী ও মুরগির খামারিরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকার তাদের না দেখলে সবাই পথের ভিখারি হয়ে যাবে।
চেল্লানদীর পানির তোড়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের গোল্লারপাড় গ্রামের ক্ষুদ্র মৎসচাষী আমির হোসেনের দু’টি পুকুরের প্রায় ৩লাখ ২৫ হাজার টাকার মাছ ভেসে গেছে। একটি পোনা মাছও তার পুকুরে নেই। তিনি বলেন- চেল্লার পানির স্রোত খুব বেশি। চোখের পলকে ঢলের পানি আমার পুকুর তছনছ করে দিল। সরকার যদি ক্ষতিপূরণ না দেয় তাহলে পথে বসন লাগবো।
শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড়ী গ্রাম সিংগাবরুনার দেলোয়ার জাহানের ৪টি পুকুরের মাছ সোমেস্বরী নদীর পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে। তিনি বলেন, 'আমার চার পুকুরে তিনলাখ টাকার মত মাছ ছিল। একটি মাছও নেই। তিনি আরও বলেন, 'আমি ক্ষুদ্র কৃষক। এ বছর শিলাবৃষ্টিতে পাঁচ একর জমির ধান নষ্ট হইছে। অহন মাছ শেষ হইলো ঢলের পানিতে। আল্লাহ কেন আমার প্রতি এত বেজার হইল বুঝি না'।
এদিকে ঢলের পানিতে প্রাণী খাতেও ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে । জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, সাম্প্রতিক বন্যায় অনেক গবাদিপুশ, মুরগি ও হাঁস মারা গেছে- এরমধ্যে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মুরগি, ১২টি গরু, ১৩টি মহিষ, ১৪টি ছাগল, ১৫টি ভেড়া, ৪০০ হাঁস মারা গেছে। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা।
ঝিনাইগাতী সদর ইউনিযনের ব্রীজ পাড় এলাকার মুরগির খামারি বেনিয়ামিন বলেন,মহারশির পানির তোড়ে এক রাতে আমার ৪টি মুরগির খামারের ডিম ও আসবাসপত্র ভেসে গেছে। আমার প্রায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হইছে। ঋণের টাকা। কিভাবে শোধ করমু ভাবলে মাথা খারাপ হইয়া যায়।
শেরপুর জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক বলেন, বন্যায় জেলার চার উপজেলায় প্রায় তিনকোটি ৩৪ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন- প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির আংশিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পানি নামলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।
জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়-ক্ষতির প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। মানবিক সরকার নিশ্চয়ই ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে।
মন্তব্য করুন