চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে আট বছর আগে নতুন একটি খাল খনন প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রকল্পটি নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা তাদের। এরই মধ্যে ব্যয় বেড়ে পাঁচ গুণ হয়েছে। কিন্তু কাজের অগ্রগতি মাত্র ৬ শতাংশ। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ক্ষোভ প্রকাশ করে। আট বছরেও একটি খাল খননে ব্যর্থ চসিকের প্রকল্পে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে দক্ষ প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

সংশ্নিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৪ সালের জুনে একনেক বহদ্দারহাটের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত (দৈর্ঘ্য ২.৯৭ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৬৫ ফুট) খাল খনন প্রকল্প অনুমোদন দেয়। ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদের প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত কাজ শুরুই করতে পারেনি চসিক। গত ১৯ এপ্রিল সর্বশেষ ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় অনুমোদন দেয় একনেক। তিন দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন করা হয়েছে।

গত ১৩ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম বিভাগের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি বিষয়ে সভা হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় জলাবদ্ধতা নিরসনে বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পটি অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় প্রকল্প পরিচালক ফরহাদুল আলম বলেন, প্রকল্পে ২৫ একর জমির মধ্যে ১০ একর অধিগ্রহণ হয়েছে। জমি অধিগ্রহণে ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে বাকি জমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এ সময় দীর্ঘ আট বছরে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র ৬ শতাংশ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে একজন দক্ষ প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের নির্দেশ দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে।

এরই মধ্যে এক মাসের ব্যবধানে প্রকল্প বাস্তবায়ন ২০ শতাংশে পৌঁছেছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার সমকালের কাছে দাবি করেন চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক ফরহাদুল আলম। আর নতুন প্রকল্প পরিচালকের বিষয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, সড়ক ও জনপথ থেকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি।

প্রকল্প সংশ্নিষ্টরা বলছেন, জমি অধিগ্রহণে শুরুতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ পায়নি জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে সরকার মৌজা রেট বৃদ্ধি করায় বেড়ে যায় ব্যয়। ভূমি অধিগ্রহণে পাঁচটি লট করা হয়েছে। গত বছর ডিসেম্বরে দুই লটে ১০ একর ভূমির দখল বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ৩ দশমিক ৮৯ একর ভূমির একটি লটে ৬৯ শতাংশ বাসিন্দা অবকাঠামো ও ভূমির ক্ষতিপূরণ পাননি। ৬ দশমিক ৯৫ একর অন্য লটের ২৩ শতাংশ ক্ষতিগস্ত মানুষ এখনও অবকাঠামো ক্ষতিপূরণ পাননি। ফলে দখল বুঝে পেলেও বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে কাজ শুরু করতে পারছে না চসিক। আর বাকি ১৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক কাজ এখনও শেষ হয়নি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল বলেন, ক্ষতিপূরণ কার্যক্রম চলমান। জমির মালিকানা নিয়ে কিছু মামলা চলছে। এগুলো নিষ্পত্তির পর ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

প্রকল্পের বিষয়ে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, তিন মাসের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ শেষ হওয়ার কথা। যে অংশে জমির দখল বুঝে পেয়েছি, সেখানে কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় এক হাজার ফুট প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।