
ফাইল ছবি
উত্তরাঞ্চলে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বানভাসি মানুষ যে যেভাবে পারছেন, ঘরে ফিরছেন। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় জেগে উঠছে ক্ষত। রাস্তাঘাট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ফসল। এখন খাবার সংকটে হাহাকার চলছে। বিশুদ্ধ পানি সংকটে বাড়ছে রোগব্যাধি। নদীভাঙনের সঙ্গে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বৃহস্পতিবার কমেছে ৪৫ সেন্টিমিটার। তবে এখনও তা বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
প্রবল বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৩ জুন থেকে তিস্তাপারে বন্যা দেখা দেয়। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ২৭টি চরগ্রামের প্রায় ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এর মধ্যে নোহালী, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, মর্নেয়া ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় এক সপ্তাহ পানি জমে থাকায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন।
গতকাল সরেজমিন রংপুরের গঙ্গাচড়ার বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে পানি কমায় তিস্তা বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো বাড়িতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাঁদের কেউ কলাগাছের ভেলা, কেউ নৌকায় মালপত্র তুলে রওনা হয়েছেন। চরের বাড়িগুলোর আঙিনায় এখন থকথকে কাদাপানি। গঙ্গাচড়ার চরাঞ্চলে রাস্তাঘাট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের আব্দুস সালাম (৬২) জানান, রাতেও যেখানে নৌকা চলেছে, সকালে সেখানে পানি নেই। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ এলাকার আমেনা বেগমের ঘর কাঁধ পানিতে ডুবেছিল, এখনও হাঁটুপানি। তিনি বলেন, 'চুলা ধরবার উপায় নাই। না খ্যায়া আর কতক্ষণ থাকা যায়।'
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, তাঁর ইউনিয়নে অন্তত ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি। পানি এখন কমতে থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে। দ্রুত উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন বলেন, দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে সংশ্নিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই সহায়তা দেওয়া হবে।
উত্তরে এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুড়িগ্রাম। সেখানে চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, নাগেশ্বরীতে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে মানুষ হাহাকার করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও তা খুবই অপ্রতুল।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবাইদুর রহমান বলেন, আগাম বন্যা হলে রোপা আমন ধানের ক্ষতি হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোপা আমন লাগানো বা রোপণ শুরু হয়নি। ফলে বন্যার পানি নেমে গেলে তা আমনের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেবে।
বন্যায় এখন পর্যন্ত রংপুর বিভাগের চার জেলায় ১৮ হাজার ৩৯৫ হেক্টর আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর বিভাগের চার জেলায় ৪৩১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রামে ২৯৪, গাইবান্ধায় ১১১, লালমনিরহাটে ১৪, নীলফামারীতে ৫ ও রংপুরে একটি বিদ্যালয় বন্ধ। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন