- সারাদেশ
- পুরো গ্রামের পাশে বাবলার পরিবার
পুরো গ্রামের পাশে বাবলার পরিবার
-samakal-62b5528639540.jpg)
দুর্গতদের জন্য বড় বড় পাতিলে রান্না করে খাবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে- সমকাল
বাবলা। বাংলা অভিধানে শব্দ ঘেঁটে অর্থ পাওয়া গেল 'কাঁটাওয়ালা গাছ'। তবে সিলেটের ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের মোতিয়ারগাঁওয়ে যে 'বাবলা'র হদিস মিলেছে তাঁর মনে কোনো কাঁটা নেই, পুরো শরীরটাই যেন হৃদয়! মোতিয়ারগাঁওয়ে ১৫৫টি পরিবারের বাস। বানের জলে ভাসছে পুরো গ্রামটাই। তবে উঁচু ভিটেমাটির ওপর নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিল একটি বাড়ি। সেটা বাবলা চৌধুরীর।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রান্নার মহাআয়োজন। বিশাল বিশাল পাতিলে চলছে ভাত, মুরগি, ডাল ও সবজি রান্না। একেকটি খাবারভর্তি পাতিল গ্রামের বানভাসি মানুষের জন্য নেওয়া হচ্ছে নৌকায় করে।
দুর্গত গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্যার পানি আসার পর গত এক সপ্তাহ পুরো গ্রামকে বাঁচিয়ে রেখেছে বাবলা চৌধুরীর পরিবার। বাবলা পেশায় ডেভেলপার ব্যবসায়ী। শুরু থেকেই তাঁরা শুকনো খাবারের পাশাপাশি ভাত, মাংস ও খিচুড়ি রান্না করে গ্রামবাসীর মাঝে বিলাচ্ছেন। বন্যা শুরুর পর একবেলাও উপোস ছিলেন এমন নজির নেই গ্রামে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামের প্রত্যেকটি মানুষের দুয়ারে রান্না করা খাবার নিয়ে হাজির হয়েছেন ওই পরিবারের সদস্যরা। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় যেভাবে একটি পরিবার পুরো গ্রামবাসীর ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য।
বাবলা চৌধুরী জানান, বন্যা শুরু হওয়ার পর দিন সিলেট থেকে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন তিনি। এরপর দুর্গত মানুষের পাশে কীভাবে দাঁড়ানো যায় সেই পরিকল্পনা করেন। গ্রামের সব বাসিন্দার নাম খাতায় লিখতে থাকেন। এরপর আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুকনো খাবার দিয়ে আসেন। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রেও খাবার দিয়েছেন।
বাবলা জানালেন, তাঁর এই উদ্যোগে সব ধরনের সহায়তা করেছেন তার লন্ডনপ্রবাসী স্ত্রী, লন্ডনপ্রবাসী চাচা ও চাচাতো ভাইবোনেরা। নাফিউল আদনান চৌধুরী নামে তাঁর এক চাচাতো ভাই গুগলে চাকরি পেয়েছেন। গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনিও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। এ ছাড়া ত্রাণ বিতরণের স্থানীয় রাজনৈতিক ও সমাজকর্মীদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটিও তৈরি করা হয়েছে। যাতে কোনো মানুষ ত্রাণের বাইরে না থাকে।
ওই গ্রামে কথা হয় আফাই নামে এক তরুণের সঙ্গে। তিনি জানান, বাবলা ও তাঁর পরিবার গ্রামবাসীর পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছে- এটা দৃষ্টান্ত। পুরো গ্রামের মধ্যে বাবলাদের বাড়ির নলকূপ পানিতে ডোবেনি। ওই নলকূপ থেকে মোটরের সাহয্যে পানি তুলে গ্রামে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করেছে ওই পরিবার।
মন্তব্য করুন