পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসব উপলক্ষে ফরিদপুরে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছে। শহরের প্রধান সড়কের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সুদৃশ্য তোরণ। মাহেন্দ্রক্ষণটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পালন করা হবে দুইদিনব্যাপী নানা কর্মসূচি। আর উদ্বোধনী জনসভায় যোগ দিতে আগামীকাল শনিবার সকালে নৌপথে সেতুর উদ্দেশে রওনা হবেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। 

জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসবকে সফল করতে ফরিদপুরের রাজনীতিবিদ এবং কর্মকর্তাদের নিয়ে দফায় দফায় মিটিং করে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সারাদেশ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের উৎসবে যেভাবে মেতেছে, ফরিদপুর সেই উৎসবে শামিল হতে সেভাবেই সেজেছে। ২৫ জুন (শনিবার) সকালে শোভাযাত্রা ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনার পর বিকেলে শেখ জামাল স্টেডিয়ামে দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পরেরদিন ২৬ জুন পদ্মা সেতু নিয়ে স্বরচিত কবিতা, গল্প ও ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় দিন বিকেলেও থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিন দেশবরেণ্য শিল্পীদের সাথে স্থানীয় শিল্পীদের নানান পরিবেশনা মঞ্চস্থ হবে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের আবেগের বিষয়। বাঙালি জাতির অহংকার এই পদ্মা সেতু। এজন্য পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসব পালনের জন্য ফরিদপুরে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের সকল প্রস্তুতি শেষ। শনিবার সকালে ফরিদপুরের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য আনন্দ-শোভাযাত্রা বের করা হবে। সকাল ৯টায় শুরু হয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে শেখ জামাল স্টেডিয়ামে শোভাযাত্রাসহ সমবেত হবেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সেখানে সকলে মিলে সরাসরি সম্প্রচার করা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনবেন। স্টেডিয়ামে এজন্য পদ্মা সেতুর একটি বড় রেপ্লিকা তৈরি করা হয়েছে।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াক আরিফ বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে ফরিদপুর শহরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। ফরিদপুরের সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানা ভবনগুলো আলোকসজ্জা করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। ঐতিহাসিক এই দিনটিকে বরণ করে আমরা স্মরণীয় করে রাখতে চাই। 

তিনি বলেন, জেলা সদরসহ আমাদের নয়টি উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা সড়ক ও নৌপথে পদ্মা সেতুর জনসভায় যাবেন জননেত্রী শেখ হাসিনার কথা শোনার জন্য। শুধু ফরিদপুর শহর থেকেই নৌপথে যাচ্ছেন পাঁচ হাজার মানুষ। তারা শনিবার সকাল ৬টায় শহরের সিএন্ডবি ঘাট ও ধলার মোড় থেকে ২৫টি লঞ্চ ও ১৫টি ট্রলারযোগে পদ্মা নদী দিয়ে জনাসভাস্থলের অদূরে গিয়ে নামবেন।

ফরিদপুরের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আলতাফ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে ফরিদপুরের মানুষের যে আবেগ তার একটি ভিন্ন মাত্রা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জেলা ফরিদপুর, আর তার কন্যার হাত দিয়েই আজ অবমুক্ত হতে যাচ্ছে সারা দেশের সাথে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের রুদ্ধ দুয়ার। আমরা অভিভূত। যারা নিন্দুক, সব কিছুর মধ্যেই যারা নেতিবাচক কিছু খুঁজে বেড়ান, তারাও স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু ব্যবহার করবেন এবং উপকৃত হবেন। এখন থেকে তারাও হয়তো বুঝতে শিখবেন, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলাই শ্রেয়।

ফরিদপুর থেকে ৩৫ সদস্যের মেডিকেল টিম

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জনসভায় গিয়ে কেউ যদি অসুস্থ পড়েন তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ফরিদপুর থেকে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল দল রওনা হয়ে গেছে। 

আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে চারটি মাইক্রো বাসে করে এই দলের সদস্যরা ফরিদপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফরিদপুরের সামনে থেকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উপলক্ষে আয়োজিত জনসভাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন। 

এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ফরিদপুরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ জলিল। কার্যক্রম সমন্বয় করছে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ফরিদপুর ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ফরিদপুর।

চিকিৎসক দলের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফরিদপুর ও ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি, মেডিসিন, সার্জারি ও অর্থো-সার্জারি বিভাগের ছয়জন কনসালটেন্ট, ১০ জন মেডিকেল কর্মকর্তা, ১০ জন স্টাফ নার্স এবং চারজন অফিস সহায়ক।

আগামীকাল শনিবার মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি ঘাটে পদ্মা সেতু উদ্বোধন শেষে জনসভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই জনসভায় ১০ লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এজন্য মাদারীপুরের সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে ৪০ শয্যার একটি হাসপাতাল ও বড় আকারের তিনটি মেডিকেল দল কাজ করছে। মাদারীপুর ছাড়াও ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুরের চিকিৎসক, নার্স ও অফিস সহকারীদের সহায়তায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এরই অংশ হিসেবে ফরিদপুর মেডিকেল দল শিবচর গেছে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ফরিদপুরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ জলিল বলেন, ফরিদপুর থেকে যাওয়া মেডিকেল দলটি প্রথমে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। এরপর তাদের হাসপাতালসহ ওই তিনটি দলে ভাগ হয়ে তারা চিকিৎসাসেবা দেবেন।