ধরলা নদীর ওপর 'শেখ হাসিনা ধরলা সেতু' উদ্বোধন করা হয়েছে পাঁচ বছর আগে। তবে এর সুফল পাচ্ছে না লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার লাখো মানুষ। সেতুর পশ্চিমে রত্নাই নদীর ওপর একটি বেইলি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে ৩০ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সবার, গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। তবে ওই স্থানে শিগগিরই নতুন সেতু হবে বলে জানিয়েছে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, লালমনিরহাট সদরের কুলাঘাট ইউনিয়নে রত্নাই নদীর ওপর ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করছে। এ কারণে শেখ হাসিনা ধরলা সেতু দিয়েও বাস, ট্রাক ও ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বেইলি সেতুর দু-এক জায়গায় স্টিলের পাত উঠে গেছে। জোড়াতালি দিয়ে সেটি চলাচলের উপযোগী রাখা হয়েছে।

এটি ভেঙে গেলে রংপুর ও লালমনিরহাটের সঙ্গে কুড়িগ্রামের কয়েকটি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। সোনাহাট স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহনেও বিঘ্ন ঘটছে। দুর্ঘটনা এড়াতে পাঁচ টনের বেশি পণ্য পরিবহনে সতর্কতা জারি করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে সড়ক বিভাগ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দুই জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ধরলা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেতু নির্মাণের পর ২০১৮ সালের ৩০ জুন শেখ হাসিনা ধরলা সেতু উদ্বোধন হয়। ৯৫০ মিটার সেতু নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১৯৫ কোটি টাকা। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুর কারণে পাঁচ বছরেও ভোগান্তি থেকে মুক্তি মেলেনি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সরওয়ার্দী জানান, বেইলি সেতুতে ভারী পণ্য নিয়ে যাতায়াত করলে কেঁপে ওঠে। অটোচালক জয়নাল বলেন, 'সরকার শত কোটি টাকা ব্যয় করি এত বড় সেতু করি দিছে। হামরা (আমরা) যাত্রী নিয়ে ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী যাতায়াত করি।'

ব্যবসায়ী সুজন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই জেলার মানুষের দাবি পূরণ করলেও রত্নাই নদীর ওপর সেতুটি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে মানুষ। আরেক ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, সেতু দিয়ে ট্রাক চলাচল না করায় পণ্য পরিবহনে তাঁদের খরচ বেশি পড়ছে। উদ্বোধনের কিছুদিন পরই লালমনিরহাট জেলা মোটর মালিক সমিতি শেখ হাসিনা ধরলা সেতু রুটে কৃষিপণ্যসহ ট্রাক ও বাস চলাচলের দাবি করে। কিন্তু পাঁচ বছরেও হয়নি সংযোগ সেতু।

লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল হামিদ বাবু বলেন, নতুন সেতু নির্মিত হলে পাল্টে যাবে দুই জেলার অর্থনীতির চিত্র। সোনাহাট স্থলবন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে। সেতু নির্মাণের আশ্বাস নয়, বাস্তবায়ন চায় মানুষ।

এ বিষয়ে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বলেন, সোনাহাট স্থলবন্দর ও দুই জেলার সংযোগের জন্য সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ। মন্ত্রণালয়ে সেতু ডিজাইন বিভাগের কাজ শেষ। ১৩৮ দশমিক ৪৪ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ২৫ মিটার চওড়া সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। জুলাইয়ে দরপত্র আহ্বান করা গেলে ডিসেম্বরে এর কাজ শুরু হবে।