- সারাদেশ
- বন্যাদুর্গতদের পাশে মহাজনের নাও
বন্যাদুর্গতদের পাশে মহাজনের নাও

টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউসবোট পরিচালনার উদ্যোক্তা প্রায় সবাই তরুণ। সামাজিক গণমাধ্যমের কল্যাণে সবাই সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলি আমরা। সহায়তা ছাড়া টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো দুর্গম অঞ্চলে বিনিয়োগ কিংবা সার্ভিস পরিচালনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে স্থানীয়দের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা ও দায়বদ্ধতা সবসময়ই কাজ করে। সুনামগঞ্জ, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর আমাদের কাজের আওতা বলে এই চার উপজেলার জন্য আমাদের নেটওয়ার্কে থাকা প্রায় ৫০টি নৌকা বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার, তাঁদের আশ্রয় দেওয়া, খাবার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই দুর্যোগ মোকাবিলা শুরু করি। এ সময় প্রায় দুই হাজারের বেশি মানুষকে আমরা আমাদের নৌকাগুলোতে আশ্রয় দিই। সেই সঙ্গে নৌকায় আশ্রয়ে থাকা মানুষসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করি। পুরো সময়টিতে সুনামগঞ্জ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। ধীরে ধীরে যোগাযোগ চালু হলে বন্যায় ক্ষতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে আমাদের কৌশলে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিই। সুনামগঞ্জ তখনও সারাদেশ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, হাওরের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর অবস্থান সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন আমাদের চেয়ে বেশি। তাছাড়া নৌপথে এখন পণ্য পরিবহনে তেমন জনপ্রিয় না হলেও বন্যার এই সময়ে এর গুরুত্ব বুঝতে পেরে আমরা সুনামগঞ্জের সঙ্গে সারাদেশের তিনটি সরবরাহসংযোগ প্রতিষ্ঠা করি। ভৈরব-নিকলী-ইটনা-জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ, চামটাবন্দর বা চামড়াঘাট-জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ এবং মোহনগঞ্জ-তাহিরপুর। ভৈরব, চামটাবন্দর ও মোহনগঞ্জের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ থাকায় এ পথগুলো সম্পর্কে সবাইকে পরিচিত করানো, আমাদের নৌকাগুলো দিয়ে ত্রাণ সংগ্রহ ও জলমগ্ন প্রতিটি স্থানে মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ বিতরণের সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস সহায়তার কাজ শুরু করি। সেই সঙ্গে সুনামগঞ্জে বন্যাদুর্গতদের লক্ষ্যে ত্রাণ সহায়তা দিতে আসা সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে তথ্য, লজিস্টিকস, আবাসন সুবিধাসহ ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে যে কোনো ধরনের সহায়তা দিতে শুরু করি। বর্তমানে শতাধিক প্রতিষ্ঠান আমাদের সহায়তায় প্রতিনিয়ত সুষ্ঠুভাবে দুর্গম অঞ্চলগুলোতেও পৌঁছে যেতে পারছে; মুহূর্তেই আমরা দুর্গত এলাকাগুলোর হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় সহায়তার বিষয়টি জানাতে পারছি সবাইকে। বন্যার প্রথম ধাক্কায় যখন জনপদের পর জনপদ ভেসে যাচ্ছে, রাতভর উদ্ধার কার্যক্রমে এগিয়ে এসেছে তরুণরাই। এখন যখন দুর্গতদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রয়োজন হচ্ছে, পুরো দেশ থেকেই ছুটে আসছেন তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা। আমাদের এই পরিশ্রম ও উদ্যোগ তখনই পূর্ণতা পায় যখন দেখি বন্যাদুর্গতরা বলেন, 'আপনাদের দেখতাম কেবল হাওরে ভ্রমণেই আসতেন, এখন আমাদের প্রয়োজনে আপনারা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, তাতে আপনাদের সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই।'
লেখক :উন্নয়নকর্মী ও নৌ-পর্যটন উদ্যোক্তা
লেখক :উন্নয়নকর্মী ও নৌ-পর্যটন উদ্যোক্তা
মন্তব্য করুন