- সারাদেশ
- চলে গেলেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ বাকশাল সদস্য দেলোয়ার হোসেন মাস্টার
চলে গেলেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ বাকশাল সদস্য দেলোয়ার হোসেন মাস্টার

দেলোয়ার হোসেন মাস্টার
না ফেরার দেশে চলে গেলেন উত্তরাঞ্চলের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, বাকশাল সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন মাস্টার। সোমবার বিকেলে বিরামপুর শহরের ধানহাটি মোড়ে নিজ বাসভবন ‘বাংলার মূখ’ এ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। মরহুমের প্রথম জানাজা মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিরামপুর সরকারি কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টায় গ্রামের বাড়ি কাটলা ইউনিয়নের পারগোবিন্দপুর গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হয়। তিনি ৩ ছেলে এবং ৪ মেয়েসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
দেলোয়ার হোসেন একজন স্কুল শিক্ষক। পেশায় বিরামপুরের একইর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেও ছিলেন পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ। একই সঙ্গে দুটি কর্মেরই মর্যাদা রেখে গেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে।
বিরামপুরে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেলোয়ার হোসেন মাস্টার
শিক্ষকতার পাশাপাশি জীবনের ২৮টি বছর তিনি বিরামপুর ও হাকিমপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দলের নেতৃত্বে দিয়েছেন।
১৯৭৫ সালে দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে বিরামপুর থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের কান্ডারি ছিলেন। ২৫ বছর বিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বাকশালের এ সদস্য। জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং নির্বাহী কমিটির সদস্যও ছিলেন। তিনি ছিলেন উত্তরাঞ্চলের আওয়ামী লীগের সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম।
রংপুর কারমাইকেল কলেজে ছাত্রলীগে জড়িত হওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনীতি শুরু। ৬০-এর দশকে ৬ দফাসহ নানা কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধু যখন উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, রংপুরসহ নানা মহাকুমা সফর ও জনসভা করেন সেই কর্মসূচিগুলোতে তিনি নিয়মিত যোগ দিতেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ ভক্ত।
মুক্তিযুদ্ধে প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আব্দুর রহিমের সঙ্গে মুজিব বাহিনীতে ছিলেন। অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন ও নির্মোহ ব্যক্তিত্বের কারণে স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়। তৃণমূল রাজনীতিতে তিনি বহু নেতাকর্মীর অনুকরণীয় আদর্শ ছিলেন। তিনি ভোগ ও ক্ষমতার রাজনীতি করেননি। অর্থ-বিত্তেও সমৃদ্ধ ছিলেন না। কিন্তু রাজনীতিতে মেধার প্রয়োগ ঘটাতেন। প্রবীণ এ আওয়ামী লীগ নেতার জীবন ও কর্ম আজকের সময়ে বিরল।
সারা জীবন নিঃস্বার্থভাবে রাজনীতি করেছেন। তবে খুবই সাধারণ জীবনযাপন করেছেন। এটিই তার আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তার রাজনীতির একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান। স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের নাগরিক ও সচেতন ব্যক্তিদের মতে, তার রাজনৈতিক জীবন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফুজ্জামান মিতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল, সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক, বিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ খায়রুল আলম (রাজু), বিরামপুর পৌর মেয়র আক্কাস আলী, বিরামপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মেজবাউল ইসলাম প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফুজ্জামান মিতা বলেন, দেলোয়ার হোসেন মাস্টার রাজনীতির বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডে পৃষ্ঠপোষকতা করে গেছেন। মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।
বিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম (রাজু) বলেন, উনার মৃত্যুতে আমরা একজন দক্ষ সংগঠককে হারালাম।
মন্তব্য করুন