- সারাদেশ
- পাথর 'অপসারণের' পর জানলেন তাঁর পিত্তথলিই নেই
পাথর 'অপসারণের' পর জানলেন তাঁর পিত্তথলিই নেই

ফাইল ছবি
জামাল খান (৪৩) একজন দিনমজুর। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করা পরীক্ষায় তিনি জানতে পারেন- তাঁর পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। ধারদেনা করে ১৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করে ২ জুলাই ঘাটাইলের ডিজিটাল ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে অপারেশন থিয়েটারে যান তিনি। কিন্তু অপারেশনের পর চিকিৎসক জানালেন, রোগীর পিত্তথলিই নেই, পাথর পাব কোথায়! এ ঘটনায় ঘাটাইলের আলোক হেলথ কেয়ারের বিরুদ্ধে আল্টাসনোগ্রাফির ভুল রিপোর্ট দেওয়ার সুবিচার চেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন জামাল খানের স্ত্রীর বড়ভাই জয়নাল আবেদিন।
জামাল খান জানান, তাঁর বাড়ি ঘাটাইলের দেউলাবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর খিলগাতি গ্রামে। কোমর ও পেটে ব্যথা অনুভব করায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর আলোক হেলথ কেয়ারে আল্টাসনোগ্রাফি করান তিনি। আল্টাসনোগ্রাফি করেন ডা. মো. সাইখুল আরাফাত। চলতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার একই ক্লিনিকে আবারও জামাল খানের আল্টাসনোগ্রাফি করেন ডা. মেরিনা জেসমিন। এভাবে দু'বারই আল্টাসনোগ্রাফি প্রতিবেদনে ধরা পড়ে তাঁর পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। চিকিৎসকরা পাথর অপসারণে অপারেশন করার পরামর্শ দেন। কিন্তু হাতে টাকা না থাকায় তা আর করা সম্ভব হয়নি। পরে ধার করে টাকা সংগ্রহ করে ২ জুলাই ডিজিটাল ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে পিত্তথলির অপারেশন করান তিনি। কিন্তু অপারেশনের পর ডা. আবু ইসহাক জানান, তাঁর পিত্তথলিই নেই।
ডা. আবু ইসহাক সমকালকে জানান, অপারেশনের সময় রোগীর পিত্তথলি দেখতে না পেয়ে রোগীর স্বজনদের ডেকে তা দেখানো হয়। আমরা মোবাইলে তা ভিডিও করে রেখেছি। যেহেতু রোগীর পিত্তথলিই নেই, তাই পাথর থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে অপারেশন করা হলো কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আল্টাসনোগ্রাফির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে অপারেশন করা হয়। আর পিত্তথলি না থাকা প্রসঙ্গে ডা. আবু ইসহাক বলেন, অনেকের জন্মের সময় থেকেই পিত্তথলি থাকে না। জামাল খানের বিষয়টিও তেমন। তাঁর জন্মের পর থেকেই পিত্তথলি নেই।
জামাল খান আরও জানান, অপারেশনের পর তিনি এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বিভিন্ন সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ আলোক হেলথ কেয়ার তাঁর কাছে থেকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে। ভুল প্রতিবেদন দিয়ে তাঁর কেন এতবড় ক্ষতি করা হলো এর বিচার চান তিনি।
জামাল খানের প্রথমবার আল্টাসনোগ্রাফি করা চিকিৎসক ও আলোক ফাউন্ডেশন হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. সাইখুল আরাফাত জানান, পিত্তথলি না থাকলেও পাথর হয়। যার পিত্তথলিই নেই তাঁর আবার পাথর হবে কীভাবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি বুঝতে আমার কাছে আসতে হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, জামাল খান অত্যন্ত দরিদ্র মানুষ। আলোক হেলথ কেয়ার তাঁর কাছ থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরীক্ষাগুলোও নাকি সঠিক ছিল না। ইউএনও এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন