সমকাল :গত অর্থবছরে চামড়া খাতে রপ্তানি আয় ৩২ শতাংশ বেড়েছে। এ ধারাবাহিকতা রাখতে কী কী সহায়তা বা উদ্যোগ নেওয়া দরকার?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন :করোনার কারণে আগের দুই বছর কমলেও গত অর্থবছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি খাত। এ গতি ধরে রাখতে হলে রপ্তানিমুখী সব ধরনের শিল্প খাতকে অভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং আমদানিযোগ্য কাঁচামাল, মোড়কসামগ্রী ইত্যাদির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করা দরকার। বিশেষ করে শুল্ক্কায়ন, পণ্য ছাড় করা ও বন্ড-সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে হবে। মোদ্দাকথা হলো, ব্যবসা সহজীকরণ নিশ্চিত করাই হবে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোত্তম নীতিসহায়তা।
সমকাল :কোন ধরনের চামড়াজাত পণ্য সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন :ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নানা ধরনের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জুতা, ট্রাভেল ব্যাগ, লেডিস ব্যাগ, বেল্ট, ওয়ালেট, পার্স, ওয়ার্কিং হ্যান্ড গ্লাভস ইত্যাদি। এসব পণ্যই বেশি রপ্তানি হয়।
সমকাল :চামড়া ও চামজাড়াত পণ্যের বর্তমান রপ্তানি আয় এক বিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় সরকার। আপনি কতটুকু আশাবাদী?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন :এ খাতের ১০-১২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী। তবে অর্জন করা সম্ভব। সেজন্য সরকারি নীতিসহায়তা একান্ত আবশ্যক। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা থাকতে হবে। পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। মনে রাখতে হবে চামড়া খাতের বর্তমান অবস্থায় উন্নীত হওয়ার পেছনে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টাই মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। সরকারের সার্বিক সহায়তা পেলে তাঁদের প্রচেষ্টা আরও বেগবান হবে। রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন সহজ হবে।
সমকাল :চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের শতভাগ কাঁচামাল দেশে পাওয়া যায়। এমন সুযোগ থাকায় এ শিল্পের বিকাশ আরও বেগবান করা যায় কীভাবে?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন :সব মহল থেকেই বলা হয়, দেশীয় কাঁচামালনির্ভর শিল্প খাতগুলোর মধ্যে চামড়া খাত প্রধান। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। তাই বলে এর সম্ভাবনা বিলুপ্ত হয়নি। উন্নত দেশগুলোর অনেকেই ট্যানারি বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক দেশ বন্ধ করার সময়সীমা ঘোষণা করেছে। কিন্তু সেসব দেশে চামড়াজাত পণ্য তৈরির কারখানা যথারীতি চালু রয়েছে। ফলে সেসব দেশে শিল্পের কাঁচামাল অর্থাৎ, ফিনিশড লেদার বা পুরো প্রস্তুত চামড়ার চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়বে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের চামড়াশিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে এ খাতের দ্রুত বিকাশ ঘটবে।
সমকাল :চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা কেমন?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন :বিশ্ববাজারে প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য কেনা-বেচা হয়। কিন্তু আমাদের রপ্তানি এক বিলিয়নের কিছু বেশি। সেই হিসাবে বাংলাদেশের হিস্যা প্রায় শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এ অংশ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
সমকাল :লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ পেয়েছে খুব কম কারখানা। এ অবস্থা থেকে বের হতে কী করতে হবে?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন :বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপকে চামড়া খাতের কারখানাগুলোর বিভিন্ন মানদণ্ড বিবেচনা করে নিরীক্ষিত সনদ দিতে হবে। তবে এলডব্লিউজির সদস্যপদ পাওয়ার আগে দেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্ধারিত মানদণ্ড অর্জন বেশি জরুরি। এ ক্ষেত্রে কেবল উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়; সরকারের পদক্ষেপও জরুরি।
সমকাল :সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের ফলে এ খাতের উন্নতি ত্বরান্বিত হওয়ার কথা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হচ্ছে না কেন?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন :চামড়া শিল্পনগরী পুরোপুরি প্রস্তুত করার আগেই কারখানা স্থানান্তরে ট্যানারি মালিকদের বাধ্য করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের যথাযথ দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও কারিগরি জ্ঞান না থাকায় নির্মিত বৃহৎ স্থাপনা যেমন- সিইটিপি, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অসম্পূর্ণ কিংবা ত্রুটিপূর্ণ রয়ে গেছে। এ কারণে উদ্যোক্তারা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পরিবেশের মানদণ্ড অর্জনের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। তাই কাঙ্ক্ষিত উন্নতি এখনও অর্জন হয়নি। উদ্যোক্তারা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন চামড়া শিল্পনগরীকে একটি আদর্শ শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তুলতে। সরকারের ইতিবাচক মনোভাবও রয়েছে। তবে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর বা অধিদপ্তরের মধ্যে আন্তরিক সমন্বয় থাকা একান্ত জরুরি।
সমকাল :এ খাতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে?
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন :অবশ্যই রয়েছে। তবে উদ্যোক্তাদের আর্থিক সংকট লাঘবে চামড়া শিল্পনগরীর প্লটের লিজ দলিল সম্পাদন ত্বরান্বিত করতে হাজারীবাগের জমির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা আবশ্যক। তাহলে উদ্যোক্তারা এ জমি বন্ধক দিয়ে ব্যাংক ঋণ এবং বিনিয়োগ বাড়াতে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারবেন। সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত প্রচেষ্টায় বিদ্যমান সংকট কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জসিম উদ্দিন বাদল