দেশের তিন জেলায় চিকিৎসকের অবহেলায় শিশু, প্রসূতি ও এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। এর মধ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ১৫ মাসের শিশু, হবিগঞ্জের মাধবপুরে এক প্রসূতি ও গাইবান্ধায় এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। এসব ঘটনায় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে উত্তেজনা দেখা দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে আবু হুসেইন নামের ১৫ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়। সে পাতাখালী গ্রামের দিনমজুর আবু সাইদের ছেলে। শিশুটির বাবা জানান, ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুকে মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে শিশুর হার্টে ছিদ্রের তথ্য দিয়ে তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ঢাকার অপর এক চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শরীরে স্যালাইন পুশ না করতে বলা হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসককে। কিন্তু সকালে কর্তব্যরত চিকিৎসক শরীরে সালাইন পুশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, স্যালাইনের ওভার ফ্লোর কারণে তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছে।

তবে শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডা. মাখদুম রানা জানান, তাকে খাবার স্যালাইন না দেওয়ায় পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তার কিডনি কাজ করছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি মেনেই চিকিৎসা দেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।

এদিকে হবিগঞ্জের মাধবপুরের প্রাইম হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বুধবার খাদিজা বেগম (২০) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। নিহত খাদিজা বেগম চৌমুহনী ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামের বাবু মিয়ার স্ত্রী। মায়ের মৃত্যুর পর নবজাতক কন্যাশিশুকে নিয়ে পরিবার দুশ্চিন্তায় পড়েছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাতালের লোকজন বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।

প্রসূতির স্বজনরা জানান, গত মঙ্গলবার দুপুরে খাদিজা বেগম প্রসব ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে মাধবপুর প্রাইম হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক শাহরীন হক মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় খাদিজার সিজার করেন এবং খাদিজা কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই খাদিজার রক্তক্ষরণ শুরু হলে বুধবার সকালে ওই ডাক্তার রোগীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। কিন্তু রোগীর স্বজনরা হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। ঢাকার পথে বুধবার ১১টায় খাদিজার মৃত্যু হয়।

মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইশতিয়াক আল মামুন বলেন, রক্তক্ষরণের সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে রক্ত দেওয়ার দরকার ছিল।

এ ঘটনায় প্রাইম হাসপাতালের পরিচালক এসানুল হক জিন্টু বলেন, রোগীকে বাঁচাতে ডাক্তার চেষ্টা করেছেন। তাঁর আয়ু নেই, তাই প্রসূতি মারা গেছেন।

অন্যদিকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল এলাকার ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বুধবার সকালে চিকিৎসকের অবহেলায় ওমর উদ্দিন (৬৬) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে হাসপাতাল সড়কে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, গাইবান্ধা সদরের বল্লমঝাড় ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত নয়ন শেখের ছেলে ওমর উদ্দিনকে অসুস্থ অবস্থায় সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক রক্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করতে বলেন। বুধবার সকাল ৮টার দিকে ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে রক্তসহ বিভিন্ন স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়। পরে রোগীকে ইনজেকশন পুশ করে স্যালাইন দিলে ওমর উদ্দিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মৃত্যুর বিষয়টি জানার পর ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ এবং ওই চিকিৎসক পালিয়ে যান।

জেলা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বিপ্লব বলেন, রোগীর পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।

সিভিল সার্জন ডা. আ ম আখতারুজ্জামান বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা রোগীকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া ঠিক হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক এম আই কাইয়ুমকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্নিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা]