- সারাদেশ
- বহাল তবিয়তে দুর্নীতির হোতা ফোরকান
বহাল তবিয়তে দুর্নীতির হোতা ফোরকান
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

মোহাম্মদ ফোরকান। কখনও বদলি হয়েছেন দুর্নীতির অভিযোগে; কখনওবা প্রশাসনিক কারণে। নারীকে হয়রানি ও অপহরণের চেষ্টার বিষয় নিয়েও নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন তিনি। এ কারণে থানায় তাঁর বিরুদ্ধে জিডিও হয়। তবে সব অভিযোগই কাটিয়ে ওঠেন তিনি। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে হিসাবরক্ষকের দায়িত্বে থাকা ফোরকানের বিরুদ্ধে সর্বশেষ ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার একটি বিল জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য প্রশাসনে। চট্টগ্রামের এক জ্যেষ্ঠ বিএমএ ও আওয়ামী লীগ নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মূলত ফোরকান এভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে ভুয়া স্বাক্ষরে বিল জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পর মো. ফোরকানকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হলেও এখনও নিয়মিত অফিসে আসছেন তিনি। এ-সংক্রান্ত ছবি ও ভিডিও সমকালের কাছে আছে। অন্যদিকে হিসাব শাখার চলতি দায়িত্ব দেওয়া ব্যক্তিকে হিসাব-সংক্রান্ত যাবতীয় নথি বুঝিয়ে না দেওয়ার অভিযোগে ফোরকানের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য প্রশাসনে চিঠি দিয়েছেন চলতি দায়িত্ব দেওয়া হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দীন খালেদ।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ ফোরকানের নিকট রক্ষিত হিসাব-সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব ও নথিপত্র নিম্নস্বাক্ষরকারীকে কর্তৃপক্ষের (হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক) প্রতিস্বাক্ষরসহ তালিকা আকারে বুঝে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সমকালকে বলেন, দায়িত্ব ও নথিপত্র বুঝিয়ে না দেওয়ার চিঠি পাওয়ার পর বিষয়টি আমরা দেখভাল করেছি। ফোরকানকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। তবে এরই মধ্যে পাসওয়ার্ডসহ হিসাব-সংক্রান্ত বেশকিছু দায়িত্ব ও নথি সে বুঝিয়ে দিয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে। অফিসে আসা প্রসঙ্গে তিনি সমকালকে বলেন, তাকে তো বহিস্কার করা হয়নি। কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি নিয়মিত অফিসে আসছেন।
তবে এত বড় ঘটনার পরও ফোরকানের নিয়মিত অফিসে আসাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্নিষ্টরা। তাদের মতে, এর সুযোগে ভুয়া বিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট কাগজপত্র নিজের হেফাজতে কিংবা গায়েব করার আশঙ্কা থাকবে বেশি। অভিযোগ থেকে বাঁচতে নানা অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগও নিতে পারেন ফোরকান।
জালিয়াতির এমন ঘটনায় বিভাগের সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ সংশ্নিষ্ট সবাইকে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন বর্তমানে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সমকালকে বলেন, 'হিসাবরক্ষক ফোরকানের এমন কাজে আমরা বিব্রত। তাঁকে বেশ কয়েকবার বদলি ও সতর্কও করা হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরও তিনি শোধরাচ্ছেন না। তাঁর বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত আমরা দুদকে অভিযোগ আকারে জমা দিয়েছি। বিএমএর এক নেতার আশ্রয়-প্রশয়ে থাকা প্রসঙ্গে তিনি সমকালকে বলেন, আমরাও নানা মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে এক নেতার সঙ্গে ফোরকানের সখ্য থাকার কথা জেনেছি। বিষয়টিও দুদককে জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, এ ধরনের ঘটনা যাতে আর স্বাস্থ্য প্রশাসনে না ঘটে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভুয়া স্বাক্ষরে বিল জালিয়াতির প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে সংশ্নিষ্টদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে। ফোরকানের বিরুদ্ধে অতীতের নানা অভিযোগ, অনিয়ম, দুর্নীতির ঘটনাগুলোও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন