- সারাদেশ
- সংকটের ঈদে বানভাসির পাশে ছিলেন না অনেকেই
সংকটের ঈদে বানভাসির পাশে ছিলেন না অনেকেই

সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে এবার ঈদুল আজহা ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। ঈদের দিনও আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন সাত হাজারের বেশি মানুষ। অনেকে বাড়ি ফিরলেও চুলা জ্বলেনি। কোরবানির মাংসও পাননি অনেকে।
সংকটের এমন ঈদে জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদরা পাশে থাকবেন এমনটাই আশা ছিল বানভাসিদের। তবে তাঁদের অনেকেই ছিলেন না নিজ এলাকায়। যাঁরা ছিলেন তাঁদের দেওয়া সহায়তাও আশানুরূপ ছিল না বলে জানিয়েছেন বানভাসিরা। অনেক রাজনীতিবিদ জানিয়েছেন, অসুস্থতার কারণে তাঁরা ঈদে এলাকায় থাকতে পারেননি। অনেকে নেই দেশে।
সংসদ সদস্যদের মধ্যে সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারা) আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুহিবুর রহমান মানিক বন্যার শুরু থেকে তাঁর নির্বাচনী এলাকার দুর্গত মানুষের পাশে ছিলেন। ট্রলারে করে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সহায়তা পৌঁছেও দিয়েছেন।
তবে অসুস্থতার কারণে ঈদের আগে গত ৫ জুলাই তিনি লন্ডনে গেছেন। সুনামগঞ্জ-৪ (সুনামগঞ্জ সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্ ঈদের সময় নিজ এলাকায় ছিলেন। ঈদের আগে সরকারি ও ব্যক্তিগত সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। তবে চাহিদা অনুযায়ী সেই সহায়তা ছিল অনেকটাই অপ্রতুল।
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনের এমপি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান দুর্যোগের শুরুতে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর দুই দফায় চার দিন ছিলেন এলাকায়। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী হাসনাত হোসাইনের দাবি, ঈদের আগে বানভাসির ঘরে ঘরে সরকারি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়াসহ মানুষের পাশে দলের নেতাকর্মীদের দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের এমপি ড. জয়া সেনগুপ্তা অসুস্থতার জন্য দেড় মাসেও এলাকায় যেতে পারেননি। তবে তাঁর দাবি, সশরীরে এলাকায় না থাকলেও সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ছেলে সৌমেন সেনগুপ্তের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে এলাকার মানুষের জন্য খাদ্যসহায়তা পাঠিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-তাহিরপুর) আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ঈদ কাটিয়েছেন নির্বাচনী এলাকায়। ঈদের দিন নির্বাচনী এলাকার ধর্মপাশায়, দ্বিতীয় দিন জামালগঞ্জে এবং তৃতীয় দিন মধ্যনগরে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।
অন্যান্য নেতার মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিউর রহমান অসুস্থ হয়ে গত ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠজন নূর মোহাম্মদ জানান, করোনা সংক্রমণের পর হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন ভুগছেন পায়ের জটিল রোগে। তিনিও এই সংকটকালে সুনামগঞ্জে আসতে পারেননি। তিনি জানিয়েছেন, মে মাসের শেষে প্রথম দফার বন্যায় ত্রাণ নিয়ে বানভাসির পাশে ছিলেন। ১৬ জুন দ্বিতীয় দফার বন্যায় অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক নুরুল হুদা মুকুটও প্রথম দিকে বন্যায় মানুষের পাশে ছিলেন। ত্রাণ বিতরণ করেছেন। তবে ঈদের সময় অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার তিনি ফিরেছেন।
তিনি জানান, অসুস্থ থাকার পরও প্রতিদিন মানুষের খোঁজ নিয়েছেন। ঈদের আগে প্রতিটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ৫০০ করে ত্রাণের প্যাকেট পাঠিয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির জানান, ঈদের এক দিন আগে ৬০০ বানভাসি মানুষকে রান্না করা গরুর মাংস খাইয়েছেন। ৭২৫ পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছেন।
ঈদের পরদিনও ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকশ মানুষকে গরুর মাংস রান্না করে খাইয়েছেন। সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্তও পৌরসভা ও নিজ উদ্যোগে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন।
মন্তব্য করুন