রাজশাহী-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ সময় পাশে বসে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা এমপির হাতে মার খাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে তাঁর শরীরের আঘাতপ্রাপ্ত স্থান দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে রাজি হননি। এমনকি মুখে আঘাতের কালো দাগটি কার মাধ্যমে হয়েছে- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তা নিয়ে কোনো কথা বলেননি।
একই সংবাদ সম্মেলনে এমপি ফারুক চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে ভিত্তিহীন খবর আসায় তাঁর তিন সন্তান রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেছে। পারিবারিক ও রাজনৈতিকভাবে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ চক্রান্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে অধ্যক্ষকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক। গতকাল বৃহস্পতিবার 'সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন' নামের সংগঠন থেকে পাঠানো এ যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান।
রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা দাবি করেন, ঘটনার রাতে এমপি ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে কয়েকজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ দেখা করতে তাঁর চেম্বারে যান।
সেখানে নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে এমপি ফারুক তাঁদের নিবৃত্ত করেন।

লিখিত বক্তব্যে সেলিম রেজা বলেন, 'এমপি সাহেবের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ একটি কুচক্রী মহল আগামী ১৫ জুলাই তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে গোদাগাড়ী-তানোর নির্বাচনী এলাকায় এমপির সুনাম, উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছে। সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয়ে আমার বাসায় প্রবেশ করেন। আমাকে অভিযোগ করার জন্য উস্কানি দেন। আমার ছবি তোলার চেষ্টা করেন। আমি ছবি তুলতে দিইনি। কোনো অভিযোগ বা মন্তব্য প্রকাশ করিনি। কার সঙ্গে তাঁর তর্ক ও হাতাহাতি হয়েছে, তা জানতে চাইলে তিনি কারও নাম প্রকাশ করেননি।

তবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মাটিকাটা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল আওয়াল রাজু বলেন, 'আমার সঙ্গেই সেলিম রেজার তর্ক-বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে আমি তাঁকে ধাক্কা দিই। এতে সেলিম রেজা আহত হয়েছেন। আমিও হয়েছি।'
জানা গেছে, গত ৭ জুলাই থিম ওমর প্লাজায় সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরীর কার্যালয়ে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাসহ ১০ জন শিক্ষক ছিলেন। সেই বৈঠকে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী অধ্যক্ষ সেলিম রেজার কাছে জানতে চান, তাঁর কলেজের কয়েকজন শিক্ষক আরেকটি কলেজের অধ্যক্ষের স্ত্রীকে নিয়ে অশ্নীল কথাবার্তা বলেছেন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? এ সময় অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। যদি এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ থাকে, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। এর পর সংসদ সদস্য তাঁর ফোনের রেকর্ড অন করে অধ্যক্ষ সেলিমকে শুনতে বলেন। এ সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে সেলিম রেজাকে মারধর করতে থাকেন।

এদিকে গতকাল 'সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন' নামের সংগঠন থেকে পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক এ ঘটনায় স্পিকারের রুলিং প্রদানসহ সংসদ সদস্য ওমর ফারুককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার দাবি জানান। স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ফ্ক্রিয় ভূমিকার কারণ অনুসন্ধানসহ ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তাঁরা। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকদের ওপর হামলা, নির্যাতন, লাঞ্ছনা, অবমাননার ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এসএমএ সবুর, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, উন্নয়ন কর্মী রোকেয়া কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, গবেষক ও সংস্কৃতি কর্মী ড. সেলু বাসিত, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব)-এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, গণজাগরণ মঞ্চের অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংস্কৃতি কর্মী এ কে আজাদ, অলক দাসগুপ্ত, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা এবং সংস্কৃতি মঞ্চের আহ্বায়ক সেলিম রেজা।

এ ছাড়া এ ঘটনার বিচার দাবিতে পৃথক বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুও এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিচার দাবি করেছেন।



বিষয় : বাড়ি ছেড়েছেন এমপি ফারুকের তিন সন্তান অধ্যক্ষকে মারধর ও লাঞ্ছিত করা

মন্তব্য করুন