- সারাদেশ
- সংখ্যা কত জানে না খোদ প্রশাসন!
চট্টগ্রামের অবৈধ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার
সংখ্যা কত জানে না খোদ প্রশাসন!

চট্টগ্রামের অবৈধ হাসপাতালে অভিযানের ছবি: ফাইল
হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাব পরিচালনা করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ আরও বেশ কয়েকটি দপ্তর থেকে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে এমন নিয়ম থাকলেও চট্টগ্রামে লাইসেন্স ছাড়াই গড়ে উঠছে একের পর এক হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাব ও ক্লিনিক। আর লাইসেন্স না নিয়েই বছরের পর বছর ধরে চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো। সঠিক তদারকি না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটি চলছে ডিগ্রিধারী চিকিৎসক-নার্স ছাড়াই। অবৈধভাবে পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত সংখ্যা কত- এ ব্যাপারে কোনো তথ্যই নেই দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি দপ্তরগুলোয়। প্রশাসনের কাছে নেই এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো তালিকাও। অথচ লাইসেন্স ছাড়া পরিচালিত হওয়ায় বিপুলসংখ্যক রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকা না থাকায় অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অবৈধভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। চট্টগ্রাম মহানগরীসহ জেলায় অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ৫৪৩টি। আর অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক আছে ১৫৭টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে ৯৪টি ও উপজেলায় আছে ৬৩টি। এ ছাড়া অনুমোদিত ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি ল্যাব রয়েছে ৩৮৬টি। এর মধ্যে মহানগরে ১৮৮টি ও উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে ১৯৮টি। তবে বৈধভাবে পরিচালিত এই তালিকার চেয়ে অবৈধভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কয়েকগুণ। চট্টগ্রামে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকাসহ তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বে আছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কার্যালয়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলোর কর্মকর্তার দপ্তরে একাধিকবার ধর্ণা দেওয়া হলেও অবৈধভাবে পরিচালিত হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনো তালিকা পাওয়া যায়নি। তালিকা না থাকার বিষয়ে কোনো সদুত্তরও দিতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির সমকালকে বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক, ল্যাব, ক্লিনিক গড়ে উঠছে। কীভাবে তাদের তালিকা করবেন? কারণ অনেকে এখন প্রতিষ্ঠান খুলে কিছুদিনের মধ্যে আবার বন্ধ করে দেয়। তবে এটা ঠিক যে, অনেক প্রতিষ্ঠান কোনো লাইসেন্স ছাড়াই অনেকদিন ধরে পরিচালিত হচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা লাইসেন্স নবায়নও করেনি। অবৈধভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে লিখিতভাবে অধিদপ্তরকে জানানো হবে। তাদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নিতে আমরা সুপারিশ করব। অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী সমকালকে বলেন, অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকা কোথা থেকে দেব? এরই মধ্যে এমন বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পিলে চমকানোর মতো অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছি। চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম পেতে যাতে জনভোগান্তির সৃষ্টি না হয় সেজন্য অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। অবৈধদের ব্যাপারে আমরা নানা মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছি। তালিকা না থাকার পেছনে পর্যাপ্ত জনবল না থাকাও একটি বড় কারণ।
ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, প্রশাসনের নীরবতার কারণেই চট্টগ্রামে ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধভাবে হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠছে। এর ব্যর্থতা প্রশাসন এড়ানোর সুযোগ নেই।
মন্তব্য করুন