লালমনিরহাট, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যার পর এবার শুরু হয়েছে প্রচণ্ড তাপদাহ। গত কয়েকদিনে তাপমাত্রার পারদ ৪০ থেকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আবহাওয়া বিভাগ এটাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরম অনুভূত হচ্ছে বেশি। প্রকৃতির এমন বৈরী আচরণে এ অঞ্চলে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। টানা ১৫ দিন ধরে চলছে এ অবস্থা। অনাবৃষ্টিতে নাভিশ্বাস উঠছে কৃষকসহ শ্রমজীবী মানুষের। এতে প্রভাব পড়েছে আমন ধান রোপণে। কেউ কেউ আমনের বীজ রোপণ করলেও বৃষ্টির অভাবে চৌচির হয়ে গেছে জমি। আবার ধান রোপণ করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন অনেক কৃষক। কৃষকসহ সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব এলাকার খবর পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা-

লালমনিরহাট :এ অঞ্চলে গত দু'মাসে দু'দফা বন্যা হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ফসলসহ ঘরবাড়ির। ডুবেছে, এখন পুড়ছে রোদে। নিচু এলাকায় বন্যার কিছু পানি অবশিষ্ট থাকলেও উঁচু জমি রোদে পুড়ে ঠনঠন অবস্থা।

কৃষকরা বলছেন, খরা অব্যাহত থাকলে ১ দোন (২৭ শতাংশ) জমিতে সেচ বাবদ খরচ পড়বে ৩ হাজার টাকা। শ্যালো মেশিনে তেলসহ সেচকাজে ঘণ্টাপ্রতি খরচ পড়ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা। এতে বেড়ে যাবে উৎপাদন খরচ।

সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের শিবের কুটি গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, 'বাহে, জমিত পানি নাই, কেমন করি আবাদ করি। সেচ দিয়া আবাদ করি হামার পুষপার নয়।'

শ্রমিক মামুন বলেন, 'রোদে শরীর ঝলসে যাওয়ার মতো অবস্থা। কাম (কাজ) না করলে মহাজন বেতন দিবে না, সংসার চলবে না, তাই বাধ্য হয়ে রোদে কাজ করছি।'

কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, রোদে তাঁর পেয়ারা বাগান শুকিয়ে গেছে। ফলন নিয়ে তিনি শঙ্কিত। জমিতে পানি না দিলে ফল বড় ও পরিপুষ্ট হবে না। তাই বাড়তি খরচ করে সেচের ব্যবস্থা করেছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সর্বোচ্চ তাপামাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শুক্রবার রেকর্ড করা হয় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা পাউবো সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২ জুলাই জেলায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুল ইসলাম জানান, জেলায় এবার ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করতে হবে। এতে খরচ বেশি হবে।

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) :উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর আষাঢ় মাসজুড়েই চলছে স্মরণকালের খরা। ১৫ আষাঢ় থেকে আমন রোপণ শুরু হয়। বীজতলা প্রস্তুত, কিন্তু বৃষ্টির অভাবে আট বিঘা জমিতে ধান রোপণ করতে পারছেন না তিনি। আমন রোপণে দেরি হলে ফলন কম হবে। তবে বৃষ্টি না হলে সেচ দিয়ে রোপণ করতে হবে। এতে খরচ বেশি হবে। তিনিসহ এ উপজেলার আমনচাষিদের একই অবস্থা বলে জানা গেছে।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মাসে মাত্র ১৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বিগত বছরের এ সময়ে ১৫৫ থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তবে এ মাসের শেষ সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. সোহানুর রহমান বলেন, দু-এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টি না হলে গভীর নলকূপ চালু করতে বলা হবে।

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) :পৌর এলাকার কৃষক মামুন বলেন, 'আমি সাড়ে ১০ বিঘা জমিতে রোপা আমন আবাদ করেছি। টানা তিন সপ্তাহ বৃষ্টি না হওয়ায় জমি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। গভীর নলকূপের পানি দিয়েও কাজ হচ্ছে না।'

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক ড. তৌফিকুর রহমান বলেন, এ অঞ্চলে টানা ২১ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা সময়মতো আবাদ শুরু করতে পারেননি। তাঁরা বিএমডিএর সঙ্গে কথা বলেছেন কৃষকদের ঠিকমতো পানি সরবরাহের ব্যাপারে। অনাবৃষ্টির কারণে এখন পর্যন্ত ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।