খড় আর ভাঙাচোরা কিছু টিনে জোড়াতালি দেওয়া ঘরের বেড়া। মরিচা ধরা টিনের চালায় পলিথিনের ছাউনি। জীর্ণ এ ঘরে স্ত্রী বাসন্তী শীল, সন্তান গোবিন্দ শীলকে নিয়ে বসবাস পরশ চন্দ্র শীলের। বৃষ্টি এলেই দুর্ভোগ বাড়ে। টিনের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে ভেসে যায় ঘর। একটু কোনাও ফাঁকা পাওয়া যায় না, যেখানে শুয়ে ঘুমাবেন।
নাপিতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলেজপাড়া গ্রামের এই বৃদ্ধ। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো মতে খাবারটুকু জোটে। নিজস্ব চার শতক জমি থাকলেও অর্থের অভাবে তাতে নতুন করে ঘর তোলা বা জীর্ণ ঘরটি মেরামত করতে পারছেন না। সরকারি ঘর পাওয়ার আশায় স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কেবল সময় আর শক্তিই খরচ হয়েছে। লাভ হয়নি এক ফোঁটাও।

দীর্ঘদিন ধরে বয়স্ক ভাতা পেলেও হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে সেটাও। এখন সব মিলে দিশেহারা অবস্থা। আক্ষেপ করে বলেন, 'সরকার মানুষক কত ঘর দেয়। কিন্তু আমি একটা ঘরও পাইলাম না। আমরা টাকাও দিতে পারি না, ঘরও পাই না।'

কথা হয় পরশের স্ত্রী বাসন্তী শীলের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'খায়া না খায়া চলতাছি। একটা ঘরের জন্য সবার কাছে গেছি। সবাই কয়, হবে হবে। কিন্তু ঘর পাই না। ছেলেটা অন্যের জুয়েলারি দোকানে বিনা বেতনে কাজ শিখতাছে। তার একটা গতি হইলেও কষ্টটা কমত।'

রৌমারী উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার স্মৃতি বলেন, পরশ চন্দ্র শীল ভূমিহীন না হওয়ায় তাঁকে ঘর দেওয়া সম্ভব হয়নি। টাকা দিতে না পারায় ঘর পাননি, বিষয়টি তা নয়।

তবে উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) রজব আলী বলেন, ভূমি বন্দোবস্ত আইন অনুযায়ী ১০ শতাংশের নিচে জমি যাদের রয়েছে, তাঁরা ভূমিহীন।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, পরবর্তী সময়ে 'জমি আছে, ঘর নাই' এই প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ এলে ওই পরিবারটিকে ঘর দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।