আমতলী উপজেলায় অর্ধশতাধিক সরকারি ভবন দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে একেবারেই ব্যবহার করা যাচ্ছে না অন্তত ৩০টি ভবন। যেগুলো পরিণত হয়েছে ভূতুড়ে বাড়িতে, বাস করছে বন্যপ্রাণী আর গবাদি পশু। অন্যদিকে, অর্ধশতাধিক অফিস ও আবাসিক ভবন রয়েছে বড় রকম ঝুঁকিতে। এসব ভবনে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা, হতে পারে প্রাণহানিও। এমন ঝুঁকি নিয়েই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করছেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকছেন জরাজীর্ণ আবাসিক ভবনগুলোতে। অনেক ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সরেজমিন দেখা যায়, আমতলী সরকারি কলেজের পেছনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) জন্য দ্বিতল অফিস ভবন, বীজাগার, মেশিন রাখার ঘর ও দুটি আবাসিকসহ পাঁচটি ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি তিনটি ভবনের সবকিছুই চুরি হয়ে গেছে, পরিণত হয়েছে ভূতুড়ে বাড়িতে।

পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডে অফিস ও আবাসিকের জন্য নির্মিত ৯টি ভবনের মধ্যে ছয়টি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়েছে। ভবনগুলোতে কারও যাতায়াত নেই। এ ছাড়া এখানকার অনেক জমিও বেদখল হয়ে গেছে।

উপজেলা পরিষদ চত্বরে আনসার, ভিডিপি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক অফিস, সমাজসেবা অফিসের জন্য আধাপাকা টিনশেড ভবন দীর্ঘদিনেও সংস্কার না করায় বৃষ্টির পানি পড়ে অনেক নথি নষ্ট হয়ে গেছে।

সমাজসেবা কর্মকর্তা মানজরুল হক কাওসার জানান, বৃষ্টির দিনে অফিসের সব জায়গা দিয়ে পানি পড়ে। একই অবস্থা এখানকার পুরোনো দ্বিতল ভবনটির। যেটির নিচতলায় রয়েছে সমবায় অফিস, উপজেলা পরিষদের হল রুম, দোতলায় রয়েছে যুব উন্নয়ন অফিস, পরিসংখ্যান অফিস, খাদ্য বিভাগ, অফিসার্স ক্লাব, হিসাবরক্ষণ অফিস ও ভাইস চেয়ারম্যানের অফিস। এ ভবনটি অনেক পুরোনো হওয়ায় প্রায়ই ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল।
সমবায় কর্মকর্তা জগলুল হায়দার জানান, দিনের মধ্যে দু-একবার চেয়ার সরাতে হয়। কেননা, প্রায়ই ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে।
হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবু ছালেহ জানান, সারাদিন ভয়ে ভয়ে অফিস করেন। এই ভবনের নিচতলায় ছিল সোনালী ব্যাংক। বছরখানেক আগে সেটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বসবাসের জন্য নির্মিত আবাসিক ভবন দুটিও ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিত বাংলো বছরের পর বছর সংস্কার না করায় এখন সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে নির্মিত তৃতীয় শ্রেণির জন্য চরতলা আবাসিক ভবন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আবাসিক ভবন দুটিরও একই দশা।
বন বিভাগের টিনশেড অফিসটিও খুবই জরাজীর্ণ। ২০০৭ সালে সিডরের সময় অফিস দুটির টিন উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার পর কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে সেখানে অফিস করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

টিঅ্যান্ডটি সড়কের উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের দ্বিতল ভবনটিও খুবই জরাজীর্ণ। আমতলী সদর ইউনিয়নের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রেরও একই অবস্থা।

উপজেলা পরিষদ চত্বরে কর্মকর্তাদের আটটি আবাসিক ভবনের মধ্যে দ্বিতল সাতটি ভবন এতই পুরোনো যে, এগুলোতে বসবাসের কোনো পরিবেশ নেই বলে জানান কর্মকর্তারা। বিআরডিবি অফিসের সামনের দুটি টিনশেড ডরমিটরির অবস্থাও নাজুক।

আমতলী ডাকবাংলো সড়কের ছয়টি সরকারি ভবনের সবক'টিই ব্যবহারের অনুপযোগী। তিনটি ভবন আমতলী হাসপাতালের কর্মচারীরা সংস্কার করে কোনোরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ বিন রশিদ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সংস্কার ও একেবারেই জরাজীর্ণগুলো ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা জরুরি। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের জন্য নতুন কমপ্লেক্স ভবন তৈরি করা প্রয়োজন। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাব পাঠানো হবে।