ওজন বাড়ানোর জন্য খুলনায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সিরিঞ্জ দিয়ে চিংড়িতে জেলিসহ বিভিন্ন অপদ্রব্য পুশ করেন। প্রশাসনের তৎপরতায় এই চক্র কিছুটা বিরতি নিলেও সুযোগ বুঝে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে এসব ভেজাল মাছ রপ্তানি হলে দেশের খ্যাতি নষ্ট হওয়ার সঙ্গে হারিয়ে যেতে পারে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে অভিযান চললেও পুশ প্রবণতা ঠেকানো যাচ্ছে না।

জানা গেছে, ঘের থেকে চিংড়ি ধরার পর চাষিরা তা ডিপো মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। অধিক লাভের আশায় ডিপোতে বসে অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা ভেজালের কর্মকাণ্ড চালান। নগরীর নতুনবাজারসহ জেলার পূর্ব রূপসা এলাকার বেশ কিছু ডিপোতে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এই মাছে ঢুকানো হয় জেলি, আটা মেশানো পানিসহ বিভিন্ন ওজন বৃদ্ধিকারী দ্রব্য। ক্রমেই এই প্রবণতা বাড়ছে, ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম পর্যায়েও।

অধিক মুনাফার আশায় এই অসাধু উপায় অবলম্বন করছেন অনেক চাষিও। বেশ কয়েকটি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা জেনেশুনেই এই চিংড়ি কিনছে।

খুলনা চিংড়ি বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান মনজির সমকালকে বলেন, তার জানা মতে এখন নতুনবাজার ও পূর্ব রূপসার ডিপোতে কেউ চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে না। গ্রাম পর্যায়ে কিছু ডিপোতে এবং কিছু মধ্যস্বত্বভোগী এই মাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে জেলি পুশ করে। এসব ভেজাল চিংড়ির অধিকাংশই বিক্রি করা হয় দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিংড়ি ডিপোর মালিক বলেন, কিছু কিছু কারখানায় এখনও পুশ করা চিংড়ি কেনা হয়ে থাকে। তারা না কিনলে কেউ ভেজাল ঢুকাত না। কয়েকটি কারখানা তাদের রপ্তানির চাহিদা পূরণ করার জন্য জেনেশুনেই পুশ করা চিংড়ি কেনে। যতদিন এসব বিক্রির সুযোগ থাকবে, ততদিন এই প্রবণতা বন্ধ হবে না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে চলতি বছর জেলি পুশ করা ৩ হাজার ৩৬৫ কেজি চিংড়ি জব্দ করেছে মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। ১৬২টি অভিযানে ডিপো মালিকদের জরিমানা করা হয় ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় সাতজনকে। অভিযানের পর আর ফলোয়াপ না করায় ফের এই অপকর্মে ফেরেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

সর্বশেষ গত ১৪ জুলাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে রূপসা থেকে অপদ্রব্য পুশ করা ২ হাজার কেজি চিংড়িসহ তিনজনকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় তাদের দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এপপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক এস হুমায়ূন কবীর বলেন, প্রতি বছর খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট থেকে গড়ে আড়াই হাজার কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি হয়। তবে জেলি পুশ করার কারণে রপ্তানির পর একাধিকবার বিদেশ থেকে এসব চিংড়ি ফেরত এসেছে। এই প্রবণতা বন্ধ না হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন রপ্তানিকারকরা।

মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিসের উপপরিচালক আবু ছাইদ বলেন, চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ ঠেকাতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ডিপোর পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলোও মনিটরিং করা হচ্ছে।