- সারাদেশ
- ইতালির রাষ্ট্রদূতের সামনে ছেলের সন্ধান চেয়ে কাঁদলেন মা
ইতালির রাষ্ট্রদূতের সামনে ছেলের সন্ধান চেয়ে কাঁদলেন মা

ছবি: সংগৃহীত
ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে ছেলের সন্ধান চেয়ে কাঁদলেন মা নাছিমা আক্তার। অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার জন্য তিন বছর আগে বাড়ি ছাড়েন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দক্ষিণ লোনসিং গ্রামের বাসিন্দা কামাল মুন্সি। গত ২৯ জুনের পর তার সন্ধান পাচ্ছেন না স্বজনেরা। শুক্রবার শরীয়তপুরে অভিবাসনসংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় ইতালির রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্রসচিবসহ অতিথিদের সামনে কাঁদতে কাঁদতে নাছিমা আক্তার ছেলের সন্ধান কামনা করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় মানবপাচার রোধ ও নিরাপদ অভিবাসন উৎসাহিত করতে এই সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
সকাল সাড়ে ১০টায় পৌরসভা মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা, গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক। উপস্থিত ছিলেন ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব আখতার হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশ্রাফুজ্জামান প্রমুখ।
কামাল মুন্সির স্বজনেরা জানান, শরীয়তপুরের নড়িয়া পৌরসভার দক্ষিণ লোনসিং এলাকার মৃত ফজলুল হক মুন্সির চার ছেলে। মেজ ছেলে কামাল মুন্সি গ্রামে কৃষিকাজ করতেন। সংসারের অভাব দূর করতে ইতালি যাওয়ার জন্য স্থানীয় দালাল হানিফ সরদারের মাধ্যমে লিবিয়া যান। তখন ওই দালালকে সাড়ে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়। এরপর লিবিয়ায় অবস্থান করা আরেক বাংলাদেশি দালাল হাসানের সঙ্গে চুক্তি করেন কামালের স্বজনেরা। তাকে বিভিন্ন সময়ে দেওয়া হয় আরও ১০ লাখ টাকা।
গত ২৯ জুন কামাল বাড়িতে ফোন করে মা নাছিমা বেগম ও স্ত্রী সামিয়া আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। কামাল তাদের জানান, ১ জুলাই তাকে নৌযানে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এরপর কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না স্বজনেরা। ৩ জুলাই লিবিয়ার দালাল হাসান ফোন করে জানান, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে কামাল মারা গেছেন। তার লাশ ফেরত পাঠাতে পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয়।
কামালের স্ত্রী সামিয়া আক্তার বলেন, বিয়ের কয়েক দিন পরেই কামাল মুন্সি ইতালি যাওয়ার জন্য রওনা হন। স্বামীর পথ চেয়ে তিন বছর ধরে বসে আছেন। ফোনে অনেকবার ফিরে আসতে বলেছিলেন। দালাল চক্র তাঁকে দেশে ফিরতে দেয়নি। তাকে জিম্মি করে বিভিন্ন সময়ে টাকা নিয়েছে। এখন আবার মৃত্যুসংবাদ দিয়ে টাকা চাচ্ছে। তারা এখন কী করবেন? কীভাবে মানুষটার সন্ধান পাবেন?
সভায় ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক পথে ইতালি গমন করা সবার জন্য উদ্বেগজনক। তাই মানবিক কারণে জীবন বাঁচাতে শ্রম অভিবাসীদের প্রতারণা ও নির্যাতন থেকে বাঁচাতে, সর্বোপরি মানব পাচার দমনে জনসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন