- সারাদেশ
- দস্যুজীবন ছেড়ে শান্তির নীড়ে হান্নান সরদার
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে স্বপ্নের বুনন
দস্যুজীবন ছেড়ে শান্তির নীড়ে হান্নান সরদার

পেছনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সারি সারি ঘর। সামনে দাঁড়ানো জলদস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা আবদুল হান্নান সরদার-সমকাল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর বদলে দিয়েছে সুন্দরবনের জলদস্যু আবদুল হান্নান সরদারের (২৫)। একদিন যে জীবন কাটত অনিশ্চয়তা ও মৃত্যুভয়ে; আশ্রয়ণ প্রকল্পের নতুন ঘরেই এখন অনাবিল শান্তি তাঁর। নতুন জীবনের স্বপ্ন বুনছেন এই জলদস্যু।
হান্নান সরদারের ঠাঁই মিলেছে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শ্রীফলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে অন্য অনেকের মতো দুই শতক জমিসহ ঘর (একক গৃহ) পেয়েছেন তিনি।
বাগেরহাটের বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শনকালে হান্নান সরদার সমকালকে শোনান তাঁর জীবনের বাঁক বদলের গল্প। বছর পাঁচেক আগে পরিবারের ১১ সদস্যের খরচ মেটাতে সুন্দরবনের জলদস্যু দলে যোগ দেন হান্নান। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পরে তিনি শতাধিক সঙ্গীকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
হান্নান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছাতেই তাঁর মতো অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছেন। এ জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে তাঁদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। শেখ হাসিনা যেন দীর্ঘ জীবন পান এবং মানুষের সেবা করে যেতে পারেন, এটি তাঁর চাওয়া।
হান্নানের সঙ্গে শ্রীফলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে নতুন ঘর পেয়েছেন জলদস্যু জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, মাছ ধরতে গেলে সুন্দরবনের দস্যুরা তাঁকে অপহরণ করে। ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে না পেরে নিজেই যুক্ত হয়ে যান জলদস্যু দলে। প্রায় দেড় বছরের দস্যুজীবন ছেড়ে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ফিরে আসেন স্বাভাবিক জীবনে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে সেই সুস্থ জীবনে ফেরা পূর্ণতা পেয়েছে তাঁর।
জিয়াউর বলেন, বর্তমানে এলাকায় নছিমন চালিয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুন্দরভাবে দিন কাটছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়ে উদ্বাস্তু জীবনের অবসান ঘটেছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার বাগেরহাটে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে যেসব নতুন ঘর দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১৩ জন এক সময় সুন্দরবনের জলদস্যু ছিলেন। তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার সব ধরনের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, বাগেরহাটের ৯টি উপজেলার তালিকাভুক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ৯৬৩। তৃতীয় পর্যায়ে ৫০০টিসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২ হাজার ৬৩৭ পরিবারের মধ্যে ঘর হস্তান্তর হয়েছে। জমি পাওয়া সাপেক্ষে বাকি ২ হাজার ৮২৬ পরিবারকেও চলতি বছরের মধ্যে জমিসহ ঘর দেওয়া হবে। এই বছরের মধ্যেই বাগেরহাটকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলা ঘোষণা করা হবে।
মুজিববর্ষে গৃহহীন সব মানুষের ঘর করে দিতে প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছেন। এরই অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় এখন পর্যন্ত তিন পর্যায়ে সারাদেশে ১ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি ঘর পেয়েছেন গৃহহীনরা। প্রতি পরিবারে গড়ে পাঁচজন হিসেবে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ হতদরিদ্র মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে আশ্রয়ণের ঘর।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান সমকালকে বলেন, একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়িঘর দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম। বিশ্বের বুকে দারিদ্র্য বিমোচনে এটি নতুন মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশাল ও মানবিক এই উদ্যোগ বিশ্বের কাছে দেশের সক্ষমতা প্রমাণেরও নজিরবিহীন ঘটনা।
মন্তব্য করুন