
চুলের ক্যাপ তৈরি করছেন তরুণীরা
সূক্ষ্ণ সুচ দিয়ে বিশেষ একটি জালের মধ্যে চুল বুনছেন কিশোরী-তরুণীরা। এই জালে কেবল চুল বোনা হয় না, প্রতিটি ফোঁড়ে স্বপ্নও গাঁথা হয়। চুলের ক্যাপ তৈরি করে নিজেদের পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি পরিবারের অভাবও দূর করছেন তাঁরা।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের বেশ কিছু নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে এই অপ্রচলিত ব্যবসা। জেলার ঈশ্বরগঞ্জ, মুক্তাগাছা ও ভালুকার বেশ কয়েকটি গ্রামে চুলের ক্যাপ তৈরির কাজ হয়। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সাতটি এলাকায় অন্তত ৭০ জন নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে এ কাজের মাধ্যমে।
নারীদের দিয়ে চুলের ক্যাপ তৈরির কাজ করায় শওকত হেয়ার ক্যাপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গ্রামের নারীদের ঝরেপড়া চুল সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে ক্যাপ তৈরির কাজ করা হয়। পরে সেই ক্যাপ চীনে রপ্তানির পাশাপাশি দেশেও ব্যবহার হয়। প্রতি ক্যাপের জন্য ৩০০ থেকে ৯০০ টাকা মজুরি পান শ্রমিকরা। প্রতি মাসে নিজেদের কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পান তাঁরা।
চরহোসেনপুর গ্রামের একটি ছোট কারখানায় ১৪ জন কিশোরী-তরুণী কাজ করেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি টেবিলে স্টু্ক্রর সাহায্যে আটকানো আছে প্লাস্টিকের ডামি মাথা। আর ডামি মাথার ওপর একটি নেট বা জাল। এ জালের ফাঁকে ফাঁকে সুচ দিয়ে আটকানো হচ্ছে একেকটি চুল। নির্দিষ্ট ওজনের চুল দেওয়া হয় কারিগরদের। ডামির পুরো মাথায় সূক্ষ্ণভাবে চুল আটকানো শেষ হলেই তৈরি হয়ে যায় ক্যাপ।
এখানে কাজ করে সপ্তম শ্রেণি পড়ূয়া আশামনি। সৎমায়ের সংসারে বেড়ে ওঠা আশার জীবনে পরিবর্তন এসেছে চুলের ক্যাপ তৈরির কাজ করে। আশার বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ ইউনিয়নের চরশিহারী গ্রামে। গত নভেম্বর থেকে চুলের এই কাজ করছে সে। প্রতি মাসে আয়ের ৪ হাজার টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কেনা, পড়ালেখা ও সংসারের নানা প্রয়োজনীয় চাহিদাও মেটাচ্ছে সে।
এখানকার কর্মী মনিরা ইসলাম মুন্নিও ঈশ্বরগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। তার বাবা কামারের কাজ করেন। চরহোসেনপুর গ্রামের মুন্নি ও তার মা শাহিনা আক্তারও এই কাজ করছেন। প্রায় দুই বছর ধরে ক্যাপ তৈরির কাজ করেই নিজের ও ভাইবোনদের পড়ালেখার খরচও দিচ্ছে মুন্নি। প্রতি মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করছে সে।
চরহোসেনপুর গ্রামের চা বিক্রেতা শহীদ মিয়ার ১৬ বছর বয়সী মেয়ে সুবর্ণা আক্তার সাথী, মাদ্রাসা পড়ূয়া খাদিজা আক্তার খুশি ও তার মা হাসিনা আক্তার এই কাজ করেই সংসারের অভাব অনেকটা দূর করেছেন।
ক্যাপ তৈরিতে সমন্বয়ক ও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন রেখা আক্তার। তার স্বামী রিকশাচালক। তিনি জানান, তিনি এ কাজ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। আধাপাকা ঘর করেছেন। তাঁর এখানে মেয়েরা কাজ করে পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছেন, সংসারেরও হাল ধরতে পারছেন। ২০২০ সাল থেকে ক্যাপ তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি।
শওকত হেয়ার ক্যাপ নামের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জামাল সিদ্দিকী। তাঁর বাড়ি সিলেটে। তিনি জানান, এখানকার নারীদের তৈরি ক্যাপ প্রথমে ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে সেগুলো চীনে যায়।
মন্তব্য করুন