জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে বরগুনার পাথরঘাটায় শতাধিক ট্রলার সাগরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা। এতে দক্ষিণাঞ্চলের সহস্রাধিক জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন।

জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়ন, ট্রলার মালিক সমিতিসহ সব মৎস্য সংগঠনের নেতাদের নিয়ে গত শনিবার এ বিষয়ে জরুরি সভা হয়েছে। সভায় তেলের দাম কমানোর দাবি জানানো হয়।

'গত শুক্রবার ১ ব্যারেল ডিজেলের দাম ছিল ১৭ হাজার টাকা, তখন একটি বড় ট্রলার সাগরে পাঠাতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হতো। এখন সেই ট্রলারে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ হবে।' বলছিলেন ট্রলার মালিক বাদশা মিয়া। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে তেলের দাম বাড়ে অথচ মাছের দাম বাড়ে না।
ট্রলার মালিক ও বিএফডিসি আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসাইন জানান, সাগরে ইলিশ সংকট এবং তেলের দাম বাড়ায় অনেক ট্রলার সাগরে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার সন্ধ্যায় পাঁচটি ট্রলার ফিরেছে বিএফডিসি মাছঘাটে। তবে ট্রলারগুলো আবার সাগরে যাবে কিনা এ নিয়ে শতাধিক জেলের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এতে ১৯ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত জেলে এফবি মা ফাতেমা ট্রলারের আলতাফ মাঝি জানান, তেলের বাড়তি দাম ট্রলার মালিকরা তাঁদের ওপরে চাপিয়ে দেবেন। তাই জেলেরা ট্রলার রেখে বাড়ি চলে যেতে চাইছেন। এ কারণে মাঝি হিসেবে তাঁর মাথা ঠিক ছিল না। এর জেরেই মারামারির ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন- বাবুল, মোসারেফ, শাহিন, জাফর মাঝি, ইয়াসিন, সুলতান আহম্মেদ, আলতাফ, ফারুক প্রমুখ।

পাইকার সমিতির সভাপতি সাফায়েত মুন্সি জানান, পরিবহন খরচ বেড়েছে। তাই মাছ কিনে পরিবহনের খরচের সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়। এ কারণে ১ কেজি ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ৮০০ কমিয়ে ৬০ হাজার ২০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।

জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি আবুল ফরাজি জানান, তাঁর ৬ ট্রলারের মধ্যে দুটি সাগরে পাঠিয়েছেন। চারটি চরে উঠিয়ে রেখেছেন। এতে ৭৮ জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন। এভাবে এ উপকূলের শত শত জেলে বেকার হয়ে পড়ছেন বলে দাবি করেন তিনি।

বিএফডিসি পাইকারি মাছবাজারের আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমীন মুন্সী জানান, দক্ষিণাঞ্চল উপকূলের ৯৫ শতাংশ মানুষ মৎস্যজীবী। ৩৮ লাখ জেলে সাগরে মাছ ধরেন। এর জোগান দেন (টাকা দেওয়া) আড়তদাররা। অনেক ট্রলার সাগরে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আড়তদারদের দাদনের কোটি কোটি টাকা মার যাবে বলে তিনি জানান।