বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে বিপাকে পড়েছে খুলনা অঞ্চলের মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকারণ কারখানাগুলো। দিন-রাত মিলিয়ে কোথাও ৬-৭ ঘণ্টা, আবার কোথাও ১৫-১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে উৎপাদন কমে গিয়ে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। জেনারেটর চালিয়ে হিমাগারে চিংড়ি সংরক্ষণ করতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ব্যয়।
রপ্তানিকারকরা জানান, ডলার সংকট মেটাতে পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। অথচ অব্যাহত লোডশেডিংয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম এ খাত এখন নাকাল। রপ্তানি পণ্য উৎপাদন কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

মৎস্য বিভাগ থেকে জানা গেছে, হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি করে প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। রপ্তানির প্রায় ৮০ ভাগ চিংড়ি খুলনা অঞ্চলের কারখানা থেকে যায়। বর্তমানে চিংড়ির ভরা মৌসুম চলছে। রপ্তানির জন্য মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ হচ্ছে দিন-রাত।

খুলনায় বর্তমানে ৩৩টি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানা চালু রয়েছে। এলাকাভেদে কিছু কারখানা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং কিছু পল্লী বিদ্যুতের আওতায় পড়েছে। ওজোপাডিকোর আওতাধীন কোম্পানিগুলো কিছু বিদ্যুৎ পেলেও বাকিগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। বিদ্যুতের অভাবে গতবারের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত রপ্তানিকারক রোজেমকো ফুডসের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ।

মৎস্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মডার্ন সি ফুডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল হক সমকালকে বলেন, ২ আগস্ট ৫ দফায় ৫ ঘণ্টা ১৫ মিনিট, ৩ আগস্ট ৬ দফায় ৬ ঘণ্টা ৫ মিনিট এবং ৪ আগস্ট ৬ দফায় ৪ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট বিদ্যুৎ ছিল না।
তিনি বলেন, প্রক্রিয়াজাত করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় চিংড়ি সংরক্ষণ করতে হয়। তা না হলে চিংড়ির গুণগত মান নষ্ট ও বিদেশে সুনাম নষ্ট হয়।

রোজেমকো ফুডস লিমিটেডের পরিচালক সেলিম রেজা সমকালকে বলেন, 'পল্লী বিদ্যুতের আওতায় থাকায় প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বাকি ৭-৮ ঘণ্টা থাকে লো-ভোল্টেজ। আমরা কারখানার কোনো যন্ত্রই চালাতে পারছি না। বিদেশে অর্ডার থাকা সত্ত্বেও গত ১৫ দিনে চিংড়ি রপ্তানি করতে পারিনি। জেনারেটর দিয়ে কোনো রকম হিমাগার চালু রেখেছি। এতে প্রতিদিন অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।'

ন্যাশনাল সি ফুডের নির্বাহী পরিচালক আতিকুর রহমান সমকালকে বলেন, চিংড়ি পচনশীল পণ্য। যত দ্রুত প্রক্রিয়াজাত করা যাবে, গুণগত মান তত ভালো থাকবে। এ কারণে ২৪ ঘণ্টাই কারখানা চালু রাখতে হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকলে সব অচল। তিনি বলেন, বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। এভাবে চললে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।

রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এস হুমায়ুন কবির বলেন, সরকার বলছে- রপ্তানি বাড়াও, দেশে ডলার আনো। কিন্তু রপ্তানি বাড়ানোর জন্য কোনো সহযোগিতাই পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ সংকটে অধিকাংশ কারখানার উৎপাদন অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় অনেক কারখানার উৎপাদন বন্ধ। জেনারেটর দিয়ে চিংড়ির গুণগত মান ঠিক রাখতে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণের বেশি দাঁড়িয়েছে।

এ ব্যাপারে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, রপ্তানি পণ্যের কারখানাগুলোকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বিষয়ে আলোচনা চলছে। এলাকাভিত্তিক একদিন ছুটি দিয়ে কারখানা বন্ধ রাখার বিষয়ে খুব শিগগির ঘোষণা আসবে।